নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী মডেল থানার আচমিতা সাকিনস্থ জর্জ ইনন্সিটিউশন এর আনুমানিক ২০০ গজ পূর্ব দিকে জনৈক হাসান এর মায়ের ধান ক্ষেত হতে গত ইং- ১৪/১১/২০২০ তারিখ ১৩.৩০ ঘটিকার মধ্যে অজ্ঞাতনামা নুরুন্নাহারের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠায় কটিয়াদী থানা পুলিশ।
নূরুন্নাহার হত্যার রহস্য উদঘাটনে নুরুন্নাহারের বড় ভাই মোঃ জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে গত ১৬/১১/২০২০ ইং তারিখে কটিয়াদী মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে অফিসার ইনচার্জ বরাবর এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে, বাদীর আপন ছোট বোন নুরুন্নাহার (২৬) গত ০৫ মাস পূর্ব হতে করিমগঞ্জ থানাধীন জনৈক রুবেল এর তত্ত্ববধানে থাকিয়া সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নিবার্হ করে আসিতেছে। গত ১৩/১১/২০২০ খ্রিঃ তারিখে বিকাল আনুমানিক ০৪.০০ ঘটিকায় ভিকটিম নুরুন্নাহার তার একমাত্র ছেলে দুহাই (২.৫)কে তার ছোট বোন শামসুন্নাহার এর নিকট রেখে ময়মনসিংহ উকিল বাবা কে দেখতে যাবে মর্মে বাসা হতে বের হয়। গত ১৪/১১/২০২০ খ্রিঃ তারিখে সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় বাদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে জানতে পারেন তার বোন নুরুন্নাহারের লাশ কটিয়াদী থানা পুলিশ কটিয়াদী মডেল থানাধীন আচমিতা সাকিনস্থ জর্জ ইনন্সিটিউশন এর আনুমানিক ২০০ গজ পূর্ব দিকে জনৈক হাসান এর মায়ের ধান ক্ষেত হতে উদ্ধার করত ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। গত ১৩/১১/২০২০ তারিখ রাত আনুমানিক ০৮.০০ ঘটিকা হতে ইং- ১৪/১১/২০২০ তারিখ ১৩.৩০ ঘটিকার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামীগন পূর্ব পরিকল্পিত মোতাবেক তার বোন নুরুন্নাহারকে গলায় রশি বা কাপড় পেঁচিয়ে হত্যা করেছে মর্মে উল্লেখ করেন। বাদীর উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে কটিয়াদী থানার মামলা নং-২৪, তাং-১৬/১১/২০২০ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড। অফিসার ইনচার্জ সূত্রোক্ত মামলাটি রুজু করত পুলিশ পরিদর্শক(নিঃ) মোঃ আনোয়ার হোসেন এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন।
গত ১৪/১১/২০২০ খ্রিঃ তারিখে উক্ত অজ্ঞাত লাশের সংবাদ পেয়ে পিবিআই,
কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসীন ইউনিট উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিংগার প্রিন্ট এর মাধ্যমে অজ্ঞাত লাশের পরিচয় উদঘাটন করে কটিয়াদী থানা পুলিশকে অবগত করে। ঘটনার শুরু হতে পিবিআই, কিশোরগঞ্জ কতর্ৃক ছায়া তদন্ত অব্যাহত থাকে।
মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর/সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই ভিকটিম নুরুন্নাহার হত্যা মামলাটি গত ১৮/১১/২০২০ তারিখ মামলাটি অধিযাচন করত পুলিশ পরিদর্শক
(নিঃ) মোঃ জামির হোসেন জিয়া এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন। তদন্তকারী অফিসার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে গত ০২/১২/২০২০ খ্রিঃ গাজীপুর জেলা, টঙ্গী থানাধীন দেওড়া এলাকা হতে ভিকটিম হত্যার সন্ধিগ্ধ আসামী রুবেল আহম্মদ(৪৪), পিতা-আঃ হামিদ, সাং-নয়াকান্দি, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা-কিশোরগঞ্জকে গ্রেফতার করে। অদ্য উক্ত আসামী ভিকটিম নুরুন্নাহারকে নিজেই
একা হত্যা করেছে মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করে।
জানাযায়, ভিকটিম নুরুন্নাহার ২০১৫ সালে মোঃ বাছির উদ্দিন (৩৪) পিতা-মৃত আঃ আজিজ, মা-বেদনা বেগম, সাং-নারান্দি, পাকুন্দিয়া, জেলা- কিশোরগঞ্জ এর বিবাহ হয়। তারা দুজন প্রায় তিন বছর নারায়নগঞ্জ গাউছিয়ায় বাসা ভাড়া করিয়া থাকতো। তার ছেলে হওয়ার পর ভিকটিম তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। তার স্বামীর বাড়িতে যেতে চায় না। তখন তাদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে তাদের মধ্যে যোগায়োগ হতো। ঘটনার প্রায় ২/৩ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না।
সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ পায় যে, আসামী রুবেল বিবাহিত এবং তার দুটি
ছেলে এবং একটি মেয়ে সন্তান আছে। ঘটনার আনুমানিক বছর খানিক পূর্বে আসামী রুবেল তার চাচী শাশুরী ময়না বেগমের বাড়িতে যায়। তখন চাচী শাশুরী আসামী রুবেল আহম্মেদকে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। উক্ত বাড়িতে আসামী রুবেল আহম্মেদ এর সাথে ভিকটিম নুরুন্নাহারের পরিচয় হয়। ভিকটিম নুরুন্নাহার আসামী রুবেলকে মামা এবং উক্ত
আসামী ভিকটিমকে খালাম্মা বলে সম্বোধন করতো। পরিচয় পর্বে দুই জন দুইজনের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে আসামী রুবেল এবং ভিকটিম নুরুন্নাহারের মধ্যে প্রায়ই কথা হতো। কয়েকদিন পর ভিকটিম নুরুন্নাহার রুবেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে সে ঢাকায় গামেন্টসে কাজ করতো, করোনার কারনে কোন কাজ কর্ম নাই। তাই তার কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখতে চায়। ভিকটিম নুরুন্নাহারকে রুবেল সেলাই কাজ শেখানোর কথা বলে করিমগঞ্জ পৌরসভার
বেপারী পাড়া (কলু পাড়া) রেনু মিয়ার বাসায় ১৭০০/-(এক হাজার সাতশত) টাকায় ভাড়া বাসা ঠিক করে দেয় এবং সেলাই কাজ করার জন্য রুবেলের বাসা থেকে একটি বাটারফ্লাই সেলাই মেশিন এনে দেয়। প্রায় সময় রুবেল ভিকটিম নুরুন্নাহারের বাসায় আসা যাওয়া করতো। রুবেল নুরুন্নাহারকে প্রায়ই কাপড় চোপড় কিনে দিত এবং বাজার সদাই করে দিত। রুবেল প্রায় সময় নুরুন্নাহারের বাসায় খাওয়া দাওয়া করিত। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক হয় এবং
তারা দুইজন পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে বেশ কযেকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এই সম্পর্কের খাতিরে রুবেল ভিকটিম নুরুন্নাহারকে কাপড়ের দোকান দিয়ে দেবে বলে তার নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩,০০০০০/- (তিন লাখ) টাকা কৌশলে নিয়া যায়। রুবেলকে ভিকটিম নুরুন্নাহার তার পাওনা টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য কিংবা বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করিলে রুবেল ঘটনার
দিন ১৩/১১/২০২০ইং তারিখ অত্যন্ত কৌশলে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিম নুরুন্নাহারের একমাত্র ছেলে দুহাই(২.৫)কে তার ছোট বোন শামছুন্নাহারের কাছে রেখে দিয়ে তারা দুজন কিশোরগঞ্জ হইতে আলাদা আলাদা ভাবে কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ড যাইয়া একত্রিত হয়ে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। তারা দুজন সারাদিন কটিয়াদি এবং বাজিতপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে
রাত অনুমান ১০/১১ টার সময় ভিকটিম নুরুন্নাহারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে নিয়া যায়। এক পর্যায়ে রুবেল তার মুখ চেপে ধরে ভিকটিমের সাথে থাকা নতুন শাড়ী দিয়ে ভিকটিম নুরুন্নাহারের গলায় প্যাচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পাশের ধান ক্ষেতে ফেলিয়া
দিয়া পালাইয়া যায়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
Leave a Reply