নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের চরশোলাকিয়া এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের তার চুরির ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা হাইস্কুলের টিচার সাইফুল ইসলাম গত দুদিন আগে মধ্যরাতে হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। জেগে দেখেন বিদ্যুৎ চলে গেছে, পাখা ঘুরছে না। এক ঘণ্টা যায়, দুই ঘণ্টা যায়, বিদ্যুতের আর দেখা নেই। সকালে দেখেন ঘরের ওপর সার্ভিস তারের (বিদ্যুতের খুঁটি থেকে মিটার পর্যন্ত সংযোগ) কাটা অংশ ঝুলছে। বুঝতে আর বাকি রইল না তার চুরি গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জানতে পারেন, ওই রাতে আশেপাশের আরও চারটি পরিবারের তার চুরি গেছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই সার্ভিস তার চুরির ঘটনা শুরু হয়। দিন দিন চুরির সংখ্যা বাড়ছেই। সর্বশেষ এক মাসে অন্তত ৫০টি চুরির খবর পাওয়া যায়।
এ চুরির বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলার সুলতান মিয়া চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত। উদ্যোগ নেন প্রতিরোধের, আয়োজন করেন বৈঠকের।
২০ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে স্থানীয় কাউন্সিলার সুলতান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত আলোচনা।
উক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন – স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলার হাসিনা হায়দার চামেলি , শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক, গাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম, স’মিল মালিক সমিতির সভাপতি আ: হামিদ, শ্রমিক নেতা হাবিবুর রহমান হাবু, সমাজ সেবক আব্দুল আলী, আব্দুল হাই, হাদিস মিয়া, রফিক, সুজন, আশিক, খোকন, রানা প্রমূখ।
বক্তব্যে তারা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, একেকটি বাসায় একাধিক বার তার চুরির ঘটনা ঘটেছে, তাতেও দুই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত অর্থনৈতিক, দ্বিতীয়ত জীবনের ঝুঁকি। চোরেরা চুরি শেষে তারের একাংশ ঝুলিয়ে রেখে যায়, যা থেকে যে কেউ বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যেতে পারে। তারা আরও বলেন, চোর চক্রের মধ্যে বিদ্যুতের কাজ জানে, এমন সদস্য আছে। মাদকাসক্ত চক্রের সদস্যও রয়েছে।
আলোচনা শেষে চুরি প্রতিরোধে এলাকাবাসীর অংশ গ্রহণে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন ও মাইকিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসময় এলাকার মুরুব্বী থেকে শুরু করে ছাত্র যুবক সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ পর্যন্ত এলাকায় প্রায় শতাধিক তার চুরির ঘটনা ঘটেছে। আবাসিকের পাশাপাশি দোকানপাঠ ও কারখানার সংযোগও রয়েছে এলাকায়। তার খোয়া যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেকে এখন সতর্ক রাত যাপন করছেন। নিজেদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারেননি কোন কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান – ইদানীং বাজারে তামার মূল্য বেড়েছে। চুরি করে আনা তারের খোলস ছাড়িয়ে তামা বের করে আনা হয়। ওই তামার বাজারমূল্য ভালো। এ জন্যই চক্রটি তার চুরিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে। তার চুরির এই ঘটনায় আমরাও বসে নেই, চোর-চক্রটিকে ধরার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি সহ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
Leave a Reply