আজ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে উত্তাল ও নিন্দার ঝড় কিশোরগঞ্জ প্রশাসনে

নিজস্ব প্রতিনিধি : “জাতির পিতার সম্মান, রাখবো মোরা অম্লান” স্লোগানেকে বুকে ধারণ করে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন (কুষ্টিয়ায়) রাতের আধারে ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের অংশ গ্রহণে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সায়েদুর রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ২ এর বিচারক কিরন শংকর হালদার, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুজিবুর রহমান, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডাঃ মোঃ এহসানুল হক,স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শরীফ সাদী, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ আ ন ম নৌশাদ খান, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান, স্বাচিপ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ মোঃ মাহবুব ইকবাল, বিএমএ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল ওয়াহাব বাদল, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বাহাদুর আলী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আমিনুল এহসানসহ বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশ সৃষ্টির আগেও অনেক রাজা বাদশা শাসন করেছেন কিন্তু এ দেশটিকে এভাবে স্বাধীন করে যেতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে এর আগেও বিকৃত করতে চেয়েছে কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। সকল ধর্ম শান্তির কথা বলে। ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের দেশে ধর্মান্ধতা উগ্রবাদের স্থান নেই। সোনার বাংলার শান্তি যারা নষ্ট করতে চায় তাদেরকে রুখে দিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।

বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশ যখন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই আমরা লক্ষ্য করি জঙ্গীবাদ ও মাদক দিয়ে আমাদেরকে দাবিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়া। ধর্ম কখনও উগ্রবাদে বিশ্বাস করে না। যে দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলমান সে দেশের মানুষকে মুসলমান বানানোর দরকার নেই। আমরা সবাই মুসলমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মের নাম নিয়ে যে অত্যাচার করেছিল পাকিস্তানিরা, তাদের অত্যাচার প্রতিহত করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আমরা সম্মান দিতে পারিনি আজ তারা সম্মান ফিরে পেয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানাই।

এছাড়াও বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, যে নামটি বাংলাদেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সকল শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর বাঙ্গালী জাতি মহান মুক্তিযু্দ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশ তথা বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্বের সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন পথ প্রদর্শক, আলোর দিশারী ও সার্বজনীন নেতা। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম তাই অবিচ্ছেদ্যভাবে ‍যুক্ত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সদ্য- স্বধীন রাষ্ট্রকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা মূলত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চেতনা ও অস্তিত্বের মর্মমূলে কুঠারাঘাতের সামিল। বক্তারা দৃড়ভাবে তাদের বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য চিরায়ত বাঙ্গালী জাতির অবিনাশী চেতনার মূর্ত প্রতীক।

ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের নেতৃবৃন্দ ও জেলায় কর্মরত প্রজাতন্ত্রের হাজারো কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category