নিজস্ব প্রতিনিধি : ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ জনগণের প্রত্যাশিত ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে কিশোরগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের গৌরাঙ্গ বাজারে অনলাইন সংবাদপত্র কিশোরগঞ্জ নিউজ অফিসে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় একযোগে সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ফিরোজ উদ্দিন ভূঁইয়া।
এতে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শফিক কবীর।
সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি প্রকৌশলী এম এ কাইয়ূম আকন্দ, অর্থ সম্পাদক মো. ফারুকুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খোকন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের সালাম জানিয়ে তিনি বলেন আপনারা জানেন, আজ থেকে ২৭ বছর আগে, ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারিয়ে চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের গড়ে তোলেন ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’-এ স্লোগানে সামাজিক আন্দোলন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র। চলচ্চিত্র জগতের ক্যারিয়ার ছেড়ে দেশের মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। নিসচার দীর্ঘ এ আন্দোলনে এসেছে অনেক অর্জন এসেছে সাফল্য। সড়কে আইন মানতে মানুষকে সচেতন করার জন্য ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি । সরকার এ দাবিকে সম্মান জানিয়ে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটির জাতীয় স্বীকৃতি দিয়েছে এবং দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের আরেকটি দাবি ছিলো সময়োযোগী সড়ক আইন। সড়কের বিশৃঙ্খলায় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ এবং দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের মর্মান্তিক মৃত্যুসহ বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন এ আইনটি পাসের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে। সরকার এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করে ২০১৮ সালে সেটিও পূরণ হয়েছে। এখন দরকার এ আইনের সঠিক প্রয়োগ। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর প্রয়োগের দিন থেকেই আইনটি হোঁচট খেল। আইনটির যথাযথ প্রয়োগে বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবহন সেক্টরের একটি অশুভ শক্তি। এর প্রায় ১৫ মাস পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর শুরু করে সরকার। প্রথম ১৪ দিন সহনীয় মাত্রায় এর প্রয়োগ ছিল। পরবর্তীতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিতে আইনের কয়েকটি বিষয় পরবর্তী ছয়মাস পর্যন্ত কনসিডারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরবর্তীতে করোনার কারণে এই আইন যথাযথ প্রয়োগের সময়সীমা বৃদ্ধি করে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগে যখনই উদ্যোগ নেয় তখনই পরিবহন সেক্টরের সেইচক্রটি বাঁধা সৃষ্টি করে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। সময় থাকতে গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে তারা মনোযোগ দেয়নি। সেইসাথে এই আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব যেমন আছে তেমনি সরকারের সেইসব মহলেরও নানা পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে এই আইনটি প্রয়োগে মাঠে সক্রিয় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করছি। আর তা না হলে নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা বা শৈথিল্য এবং মহল বিশেষের চাপের মুখে ব্যাহত হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয় তাহলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্যবিমোচন ও এসডিজি বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখছি তা আর পূরণ হবে না। তাহলে হেরে যাবে ১৮কোটি জনতা। সেইসঙ্গে হেরে যাবে বাংলাদেশ।
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সড়কে সবাইকে আইন মানতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। শুধু ভারী পরিবহন চালক নয় সকল চালকদের জন্যই এই আইন।’ সড়কে ভারী যান বলতে যেটা বোঝায় (বিআরটিএ’র তথ্যমতে) যেমন বাস, ট্রাক, কার্গো ভ্যান, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্কার ও বিশেষ ভারী বাহন- এর সংখ্যা প্রায় ৩,৪১,০০০ (তিন লাখ একচল্লিশ হাজার) আর চালক রয়েছেন ১,৫৪,৭২০ (এক লাখ চুয়ান্ন হাজার সাতশত বিশ) জন। অথচ সর্বমোট যানবাহনের সংখ্যা ৪৫,২৪,২৮৪ (সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত)। আর চালকের সংখ্যা সর্বমোট ৩৬,০২,৪১৯ (ছত্রিশ লাখ দুই হাজার চারশত উনিশ) জন। শুধু বাস-ট্রাক চালকদের নয়, সকল চালকদের সচেতন হওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে (নিসচ) কারও পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেনা কথা বলে অনিয়মের বিরুদ্ধে। সরকারের কাছে জোর দাবি পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কমিটি যে ১১১টি সুপারিশ রয়েছে তা বাস্তবায়ন ও আগামী ০১ জানুয়ারি ২০২১ সাল হতে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করা। এরপর যেন আর কোন সময় বৃদ্ধি না করা হয়। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন। পথ যেন হয় শান্তির, মত্যুর নয়।
Leave a Reply