নিউজ ডেক্স : ব্রিটেনে বাঙালিদের বৃহত্তম সামাজিক চ্যারিটি সংগঠন গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল (জিএসসি) ইন ইউকের স্কটল্যান্ড রিজিওনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৭ এপ্রিল এডেনবড়ার গ্রেফ্রায়ার্স চার্টারিস সেন্টারের হলরুমে এ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সম্মেলনে সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানের পরিচালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাজী শরিফ আহমেদ ফখরুল।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কে এইচ এম আদিল তাফাদার।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন “গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইউকে, স্কটল্যান্ড রিজিওনের পক্ষ থেকে এই দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, প্রধান অতিথি, সেন্ট্রাল কমিটির সম্মানিত এক্সেকিউটিভ বৃন্দ,বিজিএম এর নির্বাচন কমিটির এক্সেকিউটিভ বৃন্দ, সকল অতিথি, সদস্য, ও কমিউনিটির সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আপনাদের মূল্যবান সময় দিয়ে এখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের এই আয়োজনকে সম্মানিত ও প্রাণবন্ত করার জন্য আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের উপস্থিতি সংগঠনের প্রতি আপনাদের আস্থা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আপনাদের এই উপস্থিতি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে, উৎসাহ জোগায় এবং ভবিষ্যতের পথে আমাদের চলার দৃঢ়তা বাড়ায়।
আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের বর্তমান সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যকে, যারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন বিগত দিনে নীরবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সবসময় সংগঠনের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। বিগত দিনগুলোতে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো। আমাদের এডিনবরার নবীন, প্রবীণ এবং নির্বাচন কমিশনাররা মিলে আন্তরিক ভাবে কাজ করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি দেখেছি ভাতৃত্ববুধের ভিত্তিতে এই সংঘটন তথা এডিনবরা শহরের বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার প্রয়াস। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে সামনের দিনগুলোতে।
তিনি আরও বলেন, আমার বেড়ে উঠা বাংলাদেশের চা-বাগানের রাজধানী মৌলভীবাজারে। ছোটবেলায় আমি বহুবার চা-বাগানে গিয়েছি, এ যেন আমার শৈশবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনারা নিশ্চয়ই চানবাগানের এই সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। এই ছোট চা-গাছগুলো আমাদের জন্য একটি শিক্ষার প্রতীক। তারা ছোট কিন্তু দৃঢ়ভাবে মাটির সঙ্গে সংযুক্ত, শিকড় ছড়িয়ে মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে। আর সেখান থেকেই তারা প্রতিনিয়ত নতুন কুঁড়ি, নতুন চা-পাতা দেয় যা থেকে সৃষ্টি হয় নতুন প্রাণ, নতুন শক্তি। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই আসলে সেই চা-গাছের মতো। আমাদেরও উচিত মাটির সঙ্গে, আমাদের শিকড়ের সঙ্গে, আমাদের ঐতিহ্য ও কমিউনিটির সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকা। আর সেই সংযোগ থেকেই আমরা যেন নতুন চিন্তা, নতুন উদ্যোগ ও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারি। আমরা যেন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে, শুধু নিজে না নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতেও সক্ষম হই। আমরা যেন অন্যদের সুযোগ দিই, প্রশিক্ষণ দিই, সাহস জোগাই যাতে একটি প্রজন্ম আরেকটি প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে পারে। আমরা যেন ভুলে না যাই শেকড় ছাড়া যেমন গাছের অস্তিত্ব নেই তেমনি সমাজের প্রবীণ ও গুণীজন ছাড়া সমাজ চলতে পারবে না।
প্রিয় উপস্থিতি, আমি একটি সত্য গল্প বলে শেষ করছি।
গল্পের নাম, “নামহীন-যশহীন ভালবাসা” প্রতি শুক্রবার দুপুরবেলা, আমাদের এলাকার মসজিদের পাশের কোণায় এক বৃদ্ধ মানুষকে দেখা যায়। মুখে শান্ত এক হাসি, হাতে কিছু সুইট আর বিস্কুট। পরনে সাধারণ পাঞ্জাবি, চোখে-মুখে অতুলনীয় প্রশান্তি। তাঁর নাম কেউ জানে না! জানতে চাইলে শুধু বলেন, “আমি তো কেউ না, ভাই।” নামাজ শেষে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেন প্রতীক্ষায় থাকে তার জন্য। আমার ছোট ছেলেও প্রতি শুক্রবার সকাল থেকেই অপেক্ষা করে “আজকে ও চাচু আসবে তো?” তার চোখে আমি সেই উচ্ছ্বাস দেখি, যে উচ্ছ্বাস দামি খেলনায় নয়, বরং মানুষের ভালোবাসায় জন্ম নেয়।
তিনি একে একে শিশুদের হাতে বিস্কুট, সুইট তুলে দেন। কোনো লম্বা উপদেশ নয়, কেবল একটি মুচকি হাসি আর হয়তো একটাই কথা “ভাল মানুষ হতে শেখো।”
তারপর এক কোণে বসে যান, হাতে পবিত্র কোরআন, মুখে কোনো বাড়তি কথা নেই। কেউ ছবি তুলতে চাইলে বলেন, “না ভাই, এটা আল্লাহর জন্য। নাম দেখে কী হবে?” এমন একজন মানুষ যিনি কারো খবরে থাকেন না, সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই, কিন্তু প্রতিটি শিশুর হৃদয়ে তাঁর জন্য আলাদা জায়গা।
আমার মনে হয়, তাঁর মতো মানুষরা আমাদের শেখান, ভালো কাজের জন্য বাহবা দরকার হয় না। ভালোবাসা ছড়ানোটা যদি নিঃশব্দেও করা যায়, তবুও সেটি অমূল্য।
এই মানুষটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন
ভালো কাজ কখনোই ছোট নয়।
এমনকি যদি কেউ না দেখে, কেউ না বুঝে আল্লাহ ঠিকই দেখেন, ঠিকই বুঝেন।
পরিশেষে, আমি আপনাদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন, আমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করুন, এবং আমাদের সংগঠনকে মানুষের কল্যাণে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার তাওফিক দান করুন ।
সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান বিগত সেশনের রিপোর্ট প্রদান করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন গ্রেটার সিলেট ইউকে এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ফয়সল হুসাইন এম এস পি ড: ওয়ালি তছর উদ্দিন এম বি ই খসরু খান, সালেহ আহমেদ ,আলহায নুনু মিয়া , আব্দুল আযিয বেলাল , আহমেদ আলী জুবু, লুতফুর রহমান ,সামসুল ইসলাম সায়েম ,আবু মিরন ,আলাউদ্দিন আলো প্রমুখ।
বিদায়ী সভাপতি বলেন, গ্রেটার সিলেট স্কটল্যান্ড রিজিওন এর মধ্যে গনতান্ত্রিক এই ধারা অব্যাহত রেখে নবীনদের নুতন নেতৃত্বে কাজ করে যাবার আহব্বান জানিয়ে এবং সংগঠনের যে কোন প্রয়োজনে সবসময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন।
পরে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আগামী দু’বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে আহমদ আলী জুবু, সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ আবুল কালাম সহ ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সালেহ আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার আব্দুল আজিজ বেলাল ও আলহাজ্ব নুনু মিয়া দ্বায়িত্ব পালন করেন। নব-নির্বাচিতরা আগামী দিনে নতুন উদ্যোমে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply