আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি:
শীতের সবজিতে ভরপুর শিল্পাঞ্চল মাধবদী বাজার। এতে কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। তবে অধিকাংশ সবজি এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাধবদী বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চারদিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার, গ্রামের বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। তবে বাজারে সুখবর আছে অন্য প্রায় অনেক পণ্যেই। আলু, পেঁয়াজ ও সবজিসহ কিছু মুদি পণ্যেরও দাম কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। অনেকটা স্থিতিশীল মাছ-গোশতের দাম। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগি।
গত শুক্রবার নরসিংদী জেলার মাধবদী বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, বরবটি ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স বাজার ভেদে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি আকার ভেদে প্রতিটি ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পাতাকপি আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুলা বাজার ভেদে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা এবং গাজর ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়ার কাটা পিছ ৫০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, শসা বাজার ভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, বড় কদু ৬০ টাকা, ক্যাপসিকাম ৩০০ টাকা এবং পাকা টমেটোর কেজি ১২০ টাকা। সিলেটি লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে।
মাধবদী বাজারে দাম কমার তালিকায় রয়েছে শিম ও কাঁচা মরিচের। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ধরন ভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে ও কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা। শীতের বাজারে সব ধরনের শাকের সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমেছে। লাল শাক, পালং, কলমি লতার আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময়ে এসব শাক ৩০/৪০ টাকা আঁটি বিক্রি হতো। তবে এখনো দাম সেভাবে পড়েনি পুঁই শাক, লাউয়ের ডগার। পুঁই, মটরশাক আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় আর লাউ ডগার আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
শীতের বাজারের অন্যতম অনুষঙ্গ পাতাসহ পেঁয়াজ ও ফুলকি। মাধবদীর বাজারে পাতাপেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে বাজার ভেদে ৮০ টাকা, ফুলকির পিছ ৫০/৬০ টাকা। বাজারে পুরাতন আলু ৮০ টাকা, নতুন আলু ৯০ টাকা। ডিমের ডজন ১৪০ টাকা। বাজার ভেদে প্রতি হালি ডিমের দাম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কমেছে দামও। এক-দেড় মাস আগে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। কেজিতে ৪০ টাকার মতো কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বাজারে এখন দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এ ধরনের পেঁয়াজের কেজি মাস দেড়েক আগেও ছিল ১০০ টাকার মতো। আমদানি রসুন ২৪০ টাকা, দেশি রসুন ধরন ভেদে ১৬০ টাকা থেকে শুরু ১৯০ টাকা। আদা দেশি ১৪০ টাকা, আমদানি করা বড় আদা ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাধবদীর খুচরা বাজারে চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা কেজি। মিনিকেট ৭৮ টাকা, রশিদ ব্যান্ডের চিকন চাল ৭৫ টাকা। মধ্যমানের চিকন চাল আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। গুটি চাল ৫৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা।
মাধবদীর বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি, দামে কোনো পরিবর্তন নেই। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির ১৯০/২০০ টাকা, সোনালী ৩২০ টাকা এবং লেয়ার ২৮০/৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর গোশত ৭০০/৭৫০ টাকা ও খাসির গোশত ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। যদিও গত সোমবার সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও গত চারদিনে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। বিভিন্ন ব্যান্ডের পরিবেশকদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত একটি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি নতুন দামের সয়াবিন তেলের বোতল বাজারে ছাড়েনি। এজন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না। বাড়তি দাম যোগ করে বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা। তবে নতুন এ দামের তেল এখনো আসেনি। সরবরাহ সংকটের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। নতুন করে দাম বাড়ার আগে বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৭ টাকা ও খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৯ টাকা। এদিকে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়, কাতলা ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা। বড় রুই-কাতলার দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। পাঙাশ আকার ভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে সিলভার কার্প। তুলনামূলক কম দামের মাছের মধ্যে তেলাপিয়া বাজার ও আকার ভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজির দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, এক কেজির কম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের আইড় ১ হাজার ১০০ টাকা, বড় আইড় ১ হাজার ৮০০ টাকা, বড় বোয়াল ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রিঠা মাছ ৩৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, দেশি ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় শোলের কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা, ছোট শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকি মাছের কেজি ৬০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৯০০ টাকা ও ছোট চিংড়ি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কোরাল মাছ (এক কেজি ওজনের) ৮০০ টাকা, চাপিলা ২৪০ টাকা, শরপুঁটি ২২০ টাকা, পোয়া মাছের কেজি ২৪০ টাকা।
#
মোঃ আল আমিন
মাধবদী-নরসিংদী
Leave a Reply