নিজস্ব প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়া গ্রামের যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী স্থানীয় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কাছে একটি অনুপ্রেরণার নাম। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স করা এ যুবকের স্বপ্ন এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। শত বাধা বিপত্তি ও বাস্তবতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে তিনি সমাজের অনগ্রসর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, দেখাচ্ছেন তাদের আলোর দিশা। এলাকায় একটি সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলার পাশাপাশি এলাকার দারিদ্র্য বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় আড়াই হাজার যুব ও যুব মহিলাকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করেছেন। তাদের অনেকেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী এবং আত্মকর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া তিনি যুব নেতৃত্ব বিকাশ, জীবীকার জন্য দক্ষতামুলক কার্যক্রম, নিরক্ষরতা দূরীকরণ,কারিগরি প্রশিক্ষন ও প্রযুক্তি উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের নতুনক্ষেত্র উদ্ভাবন, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপন এবং পরিবেশ দূষন রোধে অবদান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা, স্থানীয় সরকারের সাথে আইনশৃঙলা উন্নয়নে কর্মকান্ড, ধূমপান ও মাধকবিরোধী প্রয়াস, সন্ত্রাস ও অন্যন্য সমাজবিরোধী কর্মকা- প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য, এসটিডি এইডস সচেতনতা, স্যানিটেশন কার্যক্রমে অবদান, বায়োগ্যাস প্রকল্পে উদ্বুদ্ধকরণ, পরিষ্কার পচ্ছিন্নতা কার্যক্রম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অংশ গ্রহণ, বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ ও যৌতুক বিরোধী আন্দোলন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড,সমাজ উন্নয়নমুলক কাজে অবদান, দেশীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার, নিজস্ব শ্রম ও মেধার প্রয়োগে নেতৃত্ব বিকশিত করে এলাকার মানুষকে সচেতন করার কাজ করে চলেছেন। আমিনুল হক সাদী ছোটবেলা থেকেই একজন উদ্যোক্তা ও সংগঠক হওয়ার পথে হাঁটেন। ২০০৪ সালে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স করে তিনি গড়ে তোলেন ‘সাদী সমন্বিত কৃষি খামার’। সে খামারে নানা ফসল উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই খামার স্থাপন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ‘সাদী সমন্বিত কৃষি খামার’ এ পুকুরে মাছ চাষ, কৃষি ফসল ও বনায়ন নার্সারি তৈরি করেন। নিজেকে স্বাবলম্বী করেই থেমে যাননি তিনি। যুব উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার যুব ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরির দিকেও তিনি মনোযোগী হন। করোনাকালে মানবিক উদ্যোগ পরিচালনা করেন। স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে ২০০৬ সালে সাদী নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত এ সংগঠনটির উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি ২০১১ সালে গড়ে তোলেন মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগার নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জ্ঞান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে। ২০২০ সালে এ পাঠাগারটি জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাঠাগারের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৯ সালে সাদী গড়ে তোলেন কিশোরগঞ্জ আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। যার মাধ্যমে জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তির উন্নয়ন ও সংরক্ষণে অবদান রেখে যাচ্ছেন তিনি।
১
[31/10, 6:01 pm] Amin Sadi: ২০২১ সালে গড়ে তোলেন ‘বয়স্ক ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে বয়স্কদের শিক্ষা দান ও বেকার যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠিত এসব সংগঠনের সদস্যরাও আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানসমূহের নিবন্ধন দিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর সাদীর কার্যক্রমকে আরও সমপ্রসারিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। সাদী ইতোমধ্যে জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সাভার, ঢাকা থেকে যুব বিনিময় কর্মসূচি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশিক্ষণ বিষয়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সাদী কিশোরগঞ্জ জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে বেকার যুবদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য আত্মকর্মী ও স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সংগঠনের কার্যক্রমের মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সমাজকর্মী আমিনুল হক সাদীর সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবরাও কর্মসংস্থানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরমধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে দেশ বিদেশে সরকারী বেসরকারীভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন সংগঠক সাদী। তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সদস্যরা সমাজ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। যুব কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত থেকে বিরল অবদান রেখে আসছেন। তাঁর সংগঠনের ব্যানারে নানা বিষয়ে বেকার যুব সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলেছেন। সাদীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি যুব নেতৃত্ব বিকাশে রয়েছেন সক্রিয়। এ সংগঠনটির নানামুখী কর্মকা-ে পুলকিত হয়ে কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন সভা সেমিনারে ট্রেনিং ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন। আন্তর্জাতিক যুব সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ সামিটের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ কান্ট্রি চ্যাপ্টারের অধীনেও যুবদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আমিনুল হক সাদী স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে খেলাধুলা, বিতর্ক, রচনা প্রতিযোগিতা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন শতাধিক পুরস্কার ও সনদ। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে ক্রেস্ট ও তিন হাজার টাকার প্রাইজবন্ড পেয়েছেন। এছাড়াও অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সাহিত্যিক এবং সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ৫০টি সনদ ও পুরস্কার লাভ করেছেন। ফলশ্রুতিতে প্রথমে নিজ মহিনন্দ ইউনিয়ন, পরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠেত্বের সম্মাননাও। ২০২২ ও ২০২৩ সালে সাদীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি জেলা প্রশাসন থেকে শ্রেষ্ঠ সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি সনদ লাভ করে পুরস্কিত হয়েছে। তরুণ সংস্কৃতি কর্মী শিল্পী নিরব রিপন বলেন, জেলা পর্যায়ে কিশোরগঞ্জের সফল যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদী দক্ষ সংগঠক হিসেবে পুরস্কার ও সনদ পেয়েছেন অনেক। জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় যুব পুরস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের সুনজর কামনা করছি।
২
[31/10, 6:02 pm] Amin Sadi: জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৪ এর কিশোরগঞ্জ জেলা মনোনয়ন কমিটির সদস্য সচিব যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক জেড এ সাহাদাৎ হোসেন বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা মনোনয়ন কমিটির সভায় যুব সংগঠক সাদীর আবেদন যাচাই বাছাই শেষে পুরস্কারের প্রস্তাবটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। এর আগে জেলার সকল উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে বহুল প্রচার করা হয়। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা হতে যুব সংগঠক (পুরুষ) ক্যাটাগরীতে কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর ১টি আবেদনপত্র পাওয়া যায়। জেলা পর্যায়ে গঠিত যুব পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো: আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ পুরস্কার প্রাপ্তির পক্ষে উপস্থাপিত তথ্যদির যাচাই করা হয় এবং আলোচনার পর সভাপতির নির্দেশনানুযায়ী যুব সংগঠক আমিনুল হক সাদীর বিষয়ে জেলা পুলিশের ডিএসবির কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলা ডিএসবির এসপি মহোদয়ের ছাড়পত্র পাওয়ার পর পরই পুরস্কারের প্রস্তাবটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। তিনি বলেন, সাদীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি যুব নেতৃত্ব বিকাশে রয়েছেন সক্রিয়। এ সংগঠনটির নানামুখী কর্মকান্ডের ফলে কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৪ খ্রিঃ এর জন্য আবেদনকারী যুব সংগঠক মো: আমিনুল হক সাদীর প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন পরিষদ কিশোরগঞ্জ সংগঠনটি আমরা যৌথভাবে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইনুর রহমান মনির ও সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: সিদ্দিকুর রহমানকে সাথে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করি। পরিদর্শন কালে সংগঠনের সভাপতি যুব সংগঠক আমিনুল হক (সাদী)সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনটি কিশোরগঞ্জ তাড়াইল রোডে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত। এটি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও সেবা মূলক স্বেচ্ছাসোবী যুব সংগঠন। সংগঠনের জায়গা, ঘর ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে অত্র এলাকায় ওই যুব সংগঠনের মাধ্যমে যুব নেতৃত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংগঠনের মাধ্যমে নানাবিধ সামাজিক কর্মকা- বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। আমরা আমিনুল হক সাদী ও তার প্রাণের সংগঠন ” যুব উন্নয়ন পরিষদ” এর উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করছি।
Leave a Reply