আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরগঞ্জে স্বামী হত্যার দায়ে স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব  প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেলওয়ে কর্মচারী মাহবুবুর রহমান (৩৮) হত্যায় তার স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক উম্মে হাসিনা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। এছাড়াও রায়ে আসামিদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন নিহত মাহবুবের স্ত্রী রোকসানা আক্তার (২৮) ও পরকীয়া প্রেমিক আসিফ (১৯)।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, স্বামী মাহবুবকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী এবং তারই প্রেমিক হত্যা করেছে, যা স্বাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমানিত হয়েছে। নিহত মাহবুবের সংসারে তিনটি সন্তান ছিল। কিন্তু সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জঘন্যতম হত্যাটির পরিকল্পনা করেন তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার। এ কারণে তারা দুজনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ভৈরব শহরের চণ্ডিবের এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মাহবুব, বাংলাদেশ রেলওয়ের এস এস ফিডার (লোকোশেড) পদে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় চাকরি করতেন। চাকরিরত অবস্থায় তার পরিবার ভৈরবের নিজ বাড়িতে বসবাস করত। মাহবুব প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে এসে দুইদিন থেকে রবিবার ঢাকায় চলেও যেতেন। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর গভীর রাতে ভৈরবের নিজ বাসায় তিনি খুন হন।
ঘটনার দিন তার স্ত্রী রোকসানা ভোরে চিৎকার করতে থাকেন তার স্বামীকে ডাকাতরা খুন করে পালিয়ে গেছে। তার ডাক চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা গিয়ে দেখেন বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় মাহবুবের লাশ পড়ে আছে। তার বুকে ছুরির আঘাত রয়েছে। এসময় স্ত্রীর হাতেও ছুরির আঘাত দেখা যায়। তখন স্ত্রী বলে ডাকাতরা তার স্বামীকে হত্যা করে তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ইতোমধ্যে স্ত্রী রোকসানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। মাহবুবের তিনটি সন্তান রয়েছে। থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ডাকাতির কোনো আলামত পরিলক্ষিত না হওয়ায় সন্দেহ পোষণ করে স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিবেশী কলেজছাত্র আসিফের সঙ্গে প্রেমের কথা স্বীকার করেন রোকসানা।
মাহবুব ঢাকায় থাকলে প্রেমিকের সঙ্গে রাতে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন তিনি। ঘটনার দিন মাহবুব ভৈরবের বাসায় আসলে তারা দুজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ানোর পর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে প্রেমিক আসিফ ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় মাহবুবকে বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। পরে কিশোরগঞ্জ আদালতে তারা দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের কথা স্বীকার করেন।
পরে পুলিশ ২০২০ সনের ৩০ মার্চ দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এপিপি সিনিয়র এডভোকেট রাখাল চন্দ্র দাস এবং আসামিপক্ষে ছিলেন এডভোকেট অশোক সরকার। মামলায় দুজনের মৃত্যুদন্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এপিপি এডভোকেট রাখাল চন্দ্র দাস ও মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই মো.
হাবিবুর রহমান।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর বিচার শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ আদালত দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন।
মামলার রায়ে বাদী ও নিহতের স্বজনরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমরা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছি। বিচারের রায়ে আমরা খুশী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category