আজ ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খাতাপত্রেই নার্স-দলীয় প্রভাবে নেতা, রয়েছে বিস্তর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মকে নিয়ম ও নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরি করে এমসি বানিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার নেই এমনকিছু অভিযোগ উঠেছে – কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মো: ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, সিনিয়র স্টাফ নার্স মো: ওমর ফারুক দীর্ঘ দিন ধরেই বিকেল ও নাইট ডিউটি করেন না। এমনকি তিনি নিজেই রোস্টার ডিউটি তৈরি করে ছাপিয়ে দেন অন্যের ঘাড়ে। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসতো বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি ও অদৃশ্য নির্যাতন। আর এভাবেই তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ চালিয়ে আসছেন অনিয়মের রাজত্ব।
নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি দপ্তরের তথ্য মতে সকল নার্সদেরই রোস্টার অনুযায়ী সকাল, বিকাল ও নাইট ডিউটি করা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ে হাসপাতালটির অন্যান্য নার্সদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার রয়েছে দীর্ঘ দিনের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নার্স ও কর্মচারী বলেন- “ওমর ফারুক” দীর্ঘ দিন ধরে নাইট ডিউটি করেন না, সকালে এসে কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘুরাফেরা করে চা-টা খেয়ে নিজের ইচ্ছেমতো চলেও যান।
যতক্ষণ থাকতেন ততক্ষণ তিনি নিজের ধান্দায় থাকতেন, তৎকালীন জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ও সাবেক নার্সিং সভাপতি আব্দুল সালামের যোগসাজশে মেডিকেল সার্টিফিকেট বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এমনকি বিগত দিনে নার্সেস এসোসিয়েশন নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ ফলাফলে নেতা নির্বাচিত হয়ে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনিয়মের রাজত্ব পরিচালনা করেন।
আওয়ামীলীগ সরকারে থাকায় তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয়ে স্থানীয় বিএমএ’র নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। যার ফলে হাসপাতালের পরিচালক থেকে শুরু করে কেউই তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস করেনি।
এখন আবার সরকার পতনের পর ভোলপাল্টে নিজেকে বিএনপি পরিবারের সন্তান বলে তার অপকর্ম ঢাকতে ১০ সেপ্টেম্বর পুরাতন স্টেডিয়ামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় আসা নিজ উপজেলার কিছু ছাত্রদের হাসপাতালে এনে সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক নার্স বলেন, বলতে গেলে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ফারুক ভাই নাইট ডিউটি তো করেনই না, তিনি বিকালেও ডিউটি করেন না। তারপরেও তিনি দেরীতে কর্মস্থলে আসেন আবার তাড়াতাড়ি চলেও যান।” শুধু খাতাপত্রেই তিনি নার্স, কাজের বেলায় নেতা। উনার কাছ থেকে কেউ সেবা পেয়েছেন এমনটা আমাদের জানা নেই, তবে এটুকু জানি গত ১১ ফেব্রুয়ারী একজন রোগী হাসপাতালে উনাকে ভাই সম্বোধন করে ভালো একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই রোগীকে সহযোগিতা নাকরে ভাই ডাকার অপরাধে তার সাথে অশালীন ভাষা ব্যাবহার করেন। পরে ঐ রোগী (ইসফাকুল ইসলাম হিরন) ১৪ ফেব্রুয়ারী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আজ পর্যন্ত অভিযোগের কোন প্রতিকার বা ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে।
এর আগেও ২০২০ সনে সরকারি আদেশে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক, উপ- সেবাতত্ত্বাবধায়ক ও নার্সিং সুপারভাইজারগণকে অযোগ্য বলে জরুরী ভিত্তিতে তার বলয়ের লোকদের পদায়ন করার জন্য ফারুক ভাই তার ফেসবুকে পোস্ট করেন, যা সরকারের বিরুদ্ধাচরণ। এ নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হয়। পরে বিভাগীয় মহাপরিচালক ৭ দিনের মধ্যে কৈফিয়ত তলব করলে ফারুক ভাই কেমনে কি করছে তা আমাদের জানা নেই।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোক্ত নার্স ওমর ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে ঐদিন তিনি ছুটিতে থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে উনার মোবাইল ফোনে এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি ২০২০ সালের বিভাগীয় মহাপরিচালক ৭ দিনের মধ্যে যে কৈফিয়ত তলব হয়েছিল তা ২১ সনে শেষ হয় স্বীকার করে বলেন, এছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই বা আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, তাছাড়া ছাত্র আন্দোলনের কোন সমন্বয়কদের আমি চিনি না জানি না। আরও কিছু জানতে চাইলে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে সিনিয়র একজন সাংবাদিকের রেফারেন্স এনে ফোনটা কেটে দেন।

এই ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন – নার্স ফারুক দাপটে প্রকৃতির ও প্রতিবন্ধী হওয়ায় হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর থেকে শুরু করে সর্বত্রই রয়েছে তার কর্তৃত্ব। তার মত/ইচ্ছা বা কথার বাহিরে গেলেই শুরু করে দেয় চিল্লা-চিল্লি এমনকি অশালীন আচরণ। তাই আমরাও তার ব্যাপারে সবসময় নিরব, কিছু দেখেও দেখিনা শুনেও শুনিনা।
হাসপাতালের (আরএমও) আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ ভৌমিক অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার কাছেও অভিযোগ আসে কিন্তু কিছু করার নেই, উনি আসলে এমনই দাপটে চরিত্রের তাকে কিছু বলাও যায় না। ইচ্ছে অনুযায়ী ডিউটিতে আসে-যায়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ’র সাথে কথা হলে তিনি জানান- আমি নতুন এসেছি, ইতোমধ্যে উনার ব্যাপারে কিছু কথা আমার কানে এসেছে। আর রোস্টার ডিউটি উনারাই তৈরি করে। তবে আনীত এসব অভিযোগ আমি দেখবো এবং তার বিরুদ্ধে এসবের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যাবস্থাও নিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category