নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতির নিদর্শন পরিদর্শন করলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের টাকা বিভাগের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ড.মো.আতাউর রহমান ও কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার আলপনা মজুমদার
ভাটি বাংলার রাজধানী তথা মহুয়া-মলুয়ার দেশ নামে খ্যাত বর্তমানের কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন ঐতিহাসিক সুখী নীলগঞ্জ এর পাশে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে ইতিহাস খ্যাত চন্দ্রাবতীর মন্দির ও তার পৈতৃক নিবাস বা জমিদারীর ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলাম প্রায় এক দশক পর।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন সময় বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে কোনো না কোনো ভাবে সংযুক্ত থাকার সুবাদে, বাংলাদেশ ও বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় আলোচনায় প্রায়শই খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন-এর রচিত বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাহিনী ঐতিহ্যবাহী ‘ময়মনসিংহ গীতিকা তথা পূর্ববঙ্গ গীতিকা রচনার মাধ্যমেই প্রথম আবিস্কৃত হয় ‘চন্দ্রাবতী’ ও তাঁর পিতা ‘দিজবংশী দাস’-এর বিশদ জীবন আলেখ্য আলোচনায় উঠে আসে।
সেই সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক আবিষ্কারের প্রায় ১০০’শ বছর পরে হলেও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯৮৭ সালে পুরাকীর্তি আইনের মাধ্যমে এটি সংরক্ষিত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এটি বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ হলেও সেই ভাবে সম্প্রচারিত হয়নি। ফলে প্রত্নপর্যটনিক সম্ভাবনাময় এমন গুরুত্বপূর্ণ মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি কালের করালগ্রাসে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি অদ্য ১৩ই আষাঢ় ১৪৪০ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ২৭শে নভেম্বর পরিদর্শনে আসা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ঢাকা বিভাগ ও কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার আলপনা মজুমদার প্রমুখ ও তাঁদের দুই পরিবারের সদস্যরা এই ঐতিহাসিক চন্দ্রাবতীর মঠ মন্দির ও তাঁদের পৈতৃক নিবাস পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয় ।
বিশেষ করে এই প্রথম বার আসা আলপনা মজুমদার বলেন, আমি এই মধ্যযুগীয় আমাদের নারী স্বাধীনতার মুর্ত প্রতীক এই মহীয়সী নারী কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতির নিদর্শনগুলো দেখে মুগ্ধ হয়েছি এবং আজকে আমাদের সনাতনী ধর্মের উল্টো /বিদায়ী রথযাত্রার পূজোতে অংশগ্রহণ করতে পেরে, মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
পরিদর্শন কালে সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক কাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর আগ্রাবাদ চট্টগ্রামের কীপার বলেন, মধ্যযুগীয় কবি দিজবংশী দাসের সুযোগ্য কন্যা ইতিহাসখ্যাত চন্দ্রাবতী যেহেতু বাংলার প্রথম মহিলা কবি এবং রামায়ণের প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে বহুল পরিচিত; তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত মঠ, মন্দির ও সমসাময়িক সময়ের আবাস স্থলের ধ্বংসাবশেষ দেখতে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসে । সেহেতু এই সকল ঐতিহাসিক স্হানের ধ্বংসাবশেষ গুলোর সঠিকভাবে সংস্কার-সংরক্ষণের ব্যবস্হা করে(এ অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কালীন সময়ে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা/সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বারবার যোগাযোগ করতে, এখন পাকা রাস্তা হয়েছে ও অন্যান্য উন্নয়নের চেষ্টা করছি), সুন্দরভাবে উপস্থাপন বা পর্যটকদের সামনে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে পারলে, একদিকে যেমন পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে, অপরদিকে তেমনিভাবে স্হানীয় শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সেই সাথে সাথে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
চন্দ্রাবতীর মঠের সাইট পরিচারক আমিনুল হক বলেন, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কীর্তিময়ী কবি চন্দ্রাবতীর পালা ও রামায়ণের কাব্যিক অনুবাদে তিনি অমর হয়ে আছেন। তার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Leave a Reply