আজ ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী লীগের কোন্দলে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা বিএনপি’র

 নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বাজিতপুর ও নিকলী নিয়ে গঠিত এই উপজেলা সংসদীয় আসনে সব রাজনৈতিক দলই এখন ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করছেন।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকার সর্বত্রই রাজনীতির টেবিলে চলছে একই আলোচনা- কেমন হবে নির্বাচন? কোন প্রার্থী মনোনয়ন পেলে কেমন হবে? কার মাধ্যমে এলাকায় উন্নয়ন করা বেশি সম্ভব, কোন প্রার্থী নির্বাচিত হলে মানুষ শান্তিতে থাকবে-এসব হিসাব-নিকাশ নিয়েই চলছে এলাকার ভোটারদের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনা।

এই আসনে (বাজিতপুর -নিকলী) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভবিষ্যৎ কান্ডারীকে বৈতরণী পার করানোর জন্য নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ।ব্যস্ত সময় পার করছে যার যার ঘর গোছাতে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ দলের সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা উঠোন বৈঠক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সমাবেশ করছেন। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ দলের প্রধানের ছবি সম্বলিত পোস্টার,ফেষ্টুন ও ব্যানারে ঈদ শুভেচ্ছা ও দোয়া চাওয়া অব্যহত রেখেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব, দলীয় সভা সমাবেশের মাধ্যমেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

বাজিতপুর উপজেলায় পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়ন এবং নিকলী উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ -৫ নির্বাচনী এলাকায় জেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যমতে মোট ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ এগার হাজার তিনশত সাতষট্টি জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা একলাখ ষাটহাজার তিনশত দশজন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা একলাখ একান্ন হাজার সাতান্ন জন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এই আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। বিএনপির সমর্থকরা এই আসনটিকে তাদের দূর্গ মনে করতো। কিন্তু স্বাধীনতার ৩৮ বৎসর পর ২০০৮ সনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিশিষ্ট শিল্পপতি মোঃ আফজল হোসেন এই আসনটি উদ্ধার করেন। টানা তিন বারের সংসদ সদস্য মোঃ আফজল হোসেন বলেন, কিছু অন্তর্কোন্দল থাকলেও দলের পরীক্ষিত তৃনমুল কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে এই আসনে আবারো নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা যাবে। তিনি আরো বলেন, এই সংসদীয় আসনে তাঁর নেতৃত্বে রাস্তাঘাট, শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবার উন্নতিসহ ব্যপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছে।এবার আবারো মনোনয়ন পেলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে একটি মাদক,সন্ত্রাসমুক্ত পরিশীলিত জেলা শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পিছিয়ে নেই মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউল হক ১৯৯৬২০০৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েও বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারেননি। তবুও এই প্রবীন নেতা এবারে মনোনয়ন লাভে দারুন আশাবাদী। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বাজিতপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডঃ শেখ নুরুন্নবী বাদল।ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা এই পোড়খাওয়া নেতা বলেন,ত্যাগি কর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বিধায় এলাকায় চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে, বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। তাই এবার শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে এলাকার জনগণের ভাগ্যন্নোয়নে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন। তিনি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগকে কতিপয় লোকের কাছে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে এলাকার ত্যাগী, পরীক্ষিত কর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।তাই এবার তিনি শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন তারা তার পক্ষেই কাজ করবেন। শেখ হাসিনার ডাকে অত্র এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন একহয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই আসন আবারো তাদের পক্ষে ধরে রাখবেন বলে ঐক্যমত পোষণ করেন।

অপরপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তবুও এই আসনের একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেছেন।বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের বিপরীতে একজন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়ার জন্য বিএনপির সর্বোচ্চ মহলে দেন দরবার করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সবাই যার যার সমর্থক নিয়ে রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।এই দৌড়ে এগিয়ে আছেন ক্লীন ইমেজের অধিকারী মুহাম্মদ বদরুল আলম শিপু। তিনি একাধারে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সন্মানীত সদস্য,ইতালি বিএনপি শাখার প্রধান উপদেষ্টা ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর সাবেক জি এস।নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কিশোরগঞ্জ -৫ আসনে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন।এই মুহূর্তে যদিও তিনি ইতালি অবস্থান করছেন,ব্যবসায়িক কাজে বর্তমানে ইতালি থাকা সত্ত্বেও তার নির্দেশনায় দলীয় সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারপরও এলাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তা সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশে চলে আসবেন এবং ব্যাপক গনসংযোগ করবেন বলে জানান, তার সমর্থকরা। বিএনপির হাইকমান্ড এবার এই আসনটি পুনরুদ্ধারে তাকেই মনোনয়ন দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এই আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ আমীর উদ্দীনের ছেলে এডঃ বদরুল মোমেন মিঠু নিজের এবং বাবার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন পাবার আশায় ভোটারদের মনযোগ আকর্ষনের জন্য ব্যাপক গনসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলে জাতীয়তাবাদী দূর্গ হিসাবে পরিচিত বাজিতপুর নিকলী আসনটি পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান। বিএনপির আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন,আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পেলে এই আসনটি পুনরায় খালেদা জিয়াকে উপহার হিসেবে পাঠাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। এছাড়াও এই আসনে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি হাজী মোঃ মাসুক মিয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও ঢাবি শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির প্রমুখ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে তদবির করছেন।
মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী এডভোকেট শামছুল আলম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন প্রত্যাসী, আমি দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে বিচরণ করে চলেছি। আমার বিশ্বাস সাধারণ ভোটারগণ আমাকে নিরাশ করবেন না। আমি নির্বাচিত হতে পারলে নিকলী-বাজিতপুর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্হার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্হ্য, কৃষি খাতের উন্নয়ন, গ্রামের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ একটি ডিজিটাল এলাকায় রুপান্তির করবো ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও এই সংসদীয় আসনে আরো মনোনয়ন প্রত্যাশী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত পাল ও বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় পরিষদের সদস্য শেখ রফিকুন্নবী সাথী, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডঃ গাজী এনায়েতুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সোহাগ ইবনে নূর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম শাহজাহান।
তবে কিশোরগঞ্জ -৫ আসনের সাধারণ জনগণ আশা করেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবেন।শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে সুষ্ঠ পরিবেশে ভোট প্রদান করে এলাকার অভিভাবক নির্বাচন করতে হলে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এটাই অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category