নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে মিলল রেকর্ড পরিমাণ ১৫ বস্তার উপরে দেশি-বিদেশি মুদ্রা এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যালংকার। আর এ টাকা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গোনার কাজে অংশ নেয় ব্যাংক, মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমখানার কয়েকশ কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী।
সাধারণত তিন মাস পর পর দান সিন্দুক খোলা হয়। এবার দুই মাস ২৯ দিন পর মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়েছে, শনিবার (০১ অক্টোবর) সকালে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলার পর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনার কাজ।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান সিন্দুকগুলো খুলে ১৫ বস্তা টাকা গণনার পর এবার মিলল ০৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকাসহ বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণ ও রূপার ভিন্ন ভিন্ন অলংকার।
দিনব্যাপী টাকা গণনা কাজ তদারকিতে অংশ নেন পাগলা মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, সাধারন সম্পাদক পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিরাজুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিলা ফেরদৌস, পাগলা মসজিদ কমিটির সদস্য সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, সদস্য তারেখ কামাল ও পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা প্রমুখসহ আরও অনেকেই।
এর আগে ২ জুলাই মসজিদের দান সিন্দুকগুলো খুলে গণনা করে তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকাসহ পাওয়া যায় স্বর্ণ ও রূপাসহ বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে, যা ভক্ত ও মুসল্লিদের আকর্ষণ করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে, এখানে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। আর এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করে থাকেন।
সূত্রমতে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।
মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়।ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কিন্তু; ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন।বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়।
Leave a Reply