মোঃ আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি :
মাধবদীতে যৌতুকের বলি হলেন এক গৃহবধূ নুপুর আক্তার দিবা (১৭)। সে মাধবদী পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের গৃহবধূ। তবে তার মৃত্যূর বিষয়টি রহস্যজনক। স্বামী বাড়ির লোকদের বক্তব্য, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। অপর দিকে বাবা’র বাড়ীর লোকজন বলছে, এটা পরিকল্পিত খুন। এই রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য কি? “হত্যা না আত্নহত্যা” এমন প্রশ্ন এলাকার সাধারণ লোকের মুখেমুখে। এ নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনাও হচ্ছে বিভিন্ন মানুষের মাঝে।
গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌর শহরের ছোট গদাইর চরের বাসার জানালার গ্রিলের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহটি উদ্ধার করে মাধবদী থানা পুলিশ।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়. মাধবদী পৌর শহরের আলগী মনোহরপুর এলাকার রেজাউল করিমের মেয়ে নুপুর আক্তার দিবা স্কুলে যাওয়া আসার পথে পরিচয় হয় ছোট গদাইর চরের মোমেন মোল্লার ছেলে রবিনে সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম। তাদের এই প্রেম গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। বছরখানেক আগে পরিবারকে না জানিয়ে তারা গোপনে বিয়ে করে।
বিয়ের পর থেকে রবিনের রূপ পাল্টে যায়। বেকার রবিন ব্যবসা করার টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রী দিবাকে চাপ দিতে থাকে। মাসখানেক আগে দিবা তার শশুড়বাড়ী ছেড়ে বাবার বাড়ী আসে এবং শশুড়বাড়ী যাবে না বলে বাবা-মাকে জানায়। ছোট বেলা থেকে অনেকটা চাপা স্বভাবের দিবা যৌতুকের জন্য শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতনের কথা না জানালেও অনেকটা কৌশলে তার মা জেনে নেন। পরে মেয়েকে বুঝিয়ে -শুনিয়ে শশুড়বাড়ী দিয়ে আসে তার মা। প্রায় মেয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতেন তার মা। গত দু’দিন ধরে তার ফোন বন্ধ থাকায় মেয়ের কোন খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে রবিনের মায়ের মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করলে দিবার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে তাই ফোন বন্ধ রেখেছে বলে জানান।
পরে গত মঙ্গলবার রাতে দিবার শশুড়বাড়ী থেকে তার গলায় দড়ি দেওয়ার খবর পায় তারা। সেখানে যাওয়ার আগেই শুনতে পায় দিবাকে মাধবদী প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে গেছে শশুড়বাড়ীর লোকজন। সেখানে গিয়ে মরদেহ দেখে পরিবারের লোকদের কাছে দিবার মৃত্যূ বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়। তারা দেখে দিবার পেট অনেকটাই ফুলে আছে এবং মুখে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
দিবার মামা ইব্রাহীম মিয়া বলেন, পরিবারের লোকজনদের না জানিয়ে একবছর আগে দিবা গোপনে রবিনকে বিয়ে করে। বিয়ের পরে আমরা সবাই তার এই বিয়ে মেনে নিলেও গত তিন মাস ধরে ব্যবসা করার জন্য বাবার বাড়ী থেকে ৭ লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তাদের মানুষিক ও শারিরীক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একদিন সে স্বামীর বাড়ী থেকে তার বাবার বাড়ী চলে আসে। পরে তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে আমরা শশুড় বাড়ী দিয়ে আসি। এই দিয়ে আসা যে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তা আমরা সেদিন বুঝতে পারিনি। এ বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন আমার ভাগ্নিটাকে সেদিন নিজের হাতে মৃত্যূপূরিতে দিয়ে এসেছি। তারা দিবাকে মেরে ফেলেছে। তরতাজা লাশের পেট কখনো ফুলে উঠেনা । আমি কখনো তা দেখিনি। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করি।
অপর দিকে দিবার শশুড় মাধবদী বড় মসজিদের নৈশ প্রহরী মোমেন মোল্লা বলেন, গতকাল মাধবদীতে ওয়াজ হচ্ছিল। আমি আর আমার ছেলে ওয়াজ শুনতে চলে আসি। ওয়াজ চলাকালীন সময়ে আমার এক ভাগ্নি ফোন করে দিবার জানালার গ্রিলের সাথে ফাঁস নেওয়ার কথা জানায়।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত মঙ্গলবার রাতে মাধবদী থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply