নিজস্ব প্রতিবেদক : স্কটিশ পার্লামেন্টের নারী কর্মী কতৃক যৌন হয়রানির অভিযোগে লেবার পার্টি থেকে বরখাস্ত হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত লোদিয়ান অঞ্চলে রিজিওনাল এমএসপি ফয়ছল চৌধুরী এমবিই।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম ‘অনুপযুক্ত আচরনের‘ অভিযোগে লেবার পার্টি থেকে ফয়ছল চৌধুরীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করার ঘোষনা দেয়া হয়। এ সময় বলা হয় তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র বা ইনডিপেনডেন্ট এমএসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ওদিকে গত ২৯শে সেপ্টেম্বর স্কটিশ ডেইলি মেইল এবং ডেইলি রেকর্ড সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে বরখাস্তের মুল কারন হিসাবে যৌন হয়রানির বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এতে জানা যায়, স্কটিশ পার্লামেন্টের জনৈক নারী কর্মচারী ফয়ছল চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেন। যা লেবার পার্টির বিশেষায়িত কেন্দ্রীয় টিম কতৃক তদন্ত করা হচ্ছে।
স্কটিশ ন্যাশন্যাল পার্টি (এসএসপি) থেকে এ ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। সঠিক তথ্য জনগনকে জানানোর জন্য লেবার পার্টির কঠোর সমালোচনা করেন স্কটিশ পার্লামেন্টের একাধিক এমএসপি।
এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এসএনপি এমপি কাস্টি ব্ল্যাকম্যান বলেন, স্কটিশ লেবার নেতা আনাস সারোয়ারের উচিত আরেকজন এমএসপি কেন বরখাস্ত হলেন, তা দ্রুত স্পষ্ট করা। স্কটিশ কনজারভেটিভ ডেপুটি লিডার র্যাচেল হ্যামিল্টন বলেন, লেবার তাদের সম্মেলনের প্রাক্কালে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলায় পড়েছে। তিনি যোগ করেন, ঘটনাটি সম্পর্কে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ হওয়া উচিত লেবারের।
২০২১ সালে গ্লাসগোতে অনুস্টিত কপ-২৬ পরিবেশ সম্মেলনে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্কটল্যান্ড আসেন। ফয়ছল চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনাকে স্কটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্টিত একটি বাংলাদেশী কমিউনিটি ইভেন্টে অতিথী হিসাবে আমন্ত্রন জানানো হয়। যদিও স্কটিশ পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে এধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এরফলে ফয়ছল চৌধুরী আওয়ামী সরকারের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। ২০২৩ সালে স্কটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে ক্রস পার্টি পার্লামেন্টারী ভিজিটের নামে বাংলাদেশ ভ্রমন কালে গণভবনে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করেন। উক্ত ভ্রমনের কিছু এয়ার টিকেট স্পন্সর করেন লন্ডন ভিত্তিক একটি ইমিগ্রেশন ফার্ম। স্কটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ভাবে এসব তথ্য পাওয়া যাবে। এসময় তিনি শেখ হাসিনার পা ছুয়ে আশীর্বাদ গ্রহন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে মা বলে সম্বোধন করেন। এ নিয়ে সেসময় কমিউনিটিতে সৃষ্টি হয় তুমুল বিতর্ক। অন্যদিকে স্কটল্যান্ডে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ব্যাক্তিদের নানাভাবে ভয় দেখিয়ে ও হুমকি দিয়ে এসব আন্দোলন থেকে বিরত রাখতেন। বিগত জুলাই আন্দোলনে যোগ দেয়া প্রবাসীদের তিনি বাংলাদেশী পাসপোর্ট ও ভিসা দেয়া হবে না এবং বাংলাদেশে গেলে বিপদ হবে বলে ভয় দেখাতেন। সম্প্রতি ফয়ছল চৌধুরীর মদদে স্কটিশ পার্লামেন্টের সামনে আন্তর্বতী সরকারের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড আওয়ামী লীগের উদ্যেগে বিক্ষোভ অনুষ্টিত হয়। এরফলে ফয়ছল চৌধুরী ভুমিকা নিয়ে কমিউনিটির অনেকেই অসন্তৃষ্ট।
স্কটল্যন্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়ছল চৌধুরী এমবিই দীর্ঘকাল ধরে স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশী রাজনীতি এবং কমিউনিটি এক্টিভিজম এর সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। বিগত এক যুগ ধরে এডিনবরা এন্ড লোদিয়ান ইকুয়ালিটি কাউনিন্সলের (এলরেক) চেয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অতীতে তিনি বাংলাদেশ সমিতির চেয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি এডিনবরা মেলার প্রতিষ্টাতা সদস্য। ফয়ছল চৌধুরী লেবার রাজনীতির সাথে সক্রিয় হন ২০১৪ সাথে এবং ২০১৭ সালে ওয়েস্টমিনিষ্টার পার্লামেন্ট নির্বাচনে এডিনবরা সাউথ ওয়েস্ট আসন থেকে এমপি প্রার্থী হিসাবে লেবারের মনোনয়ন পান।
২০১৬ সালে ফয়ছল চৌধুরী এডিনবরা মেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ার থাকাকালে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এডিনবরা কাউন্সিল তাদের নিয়মিত ফান্ডিং বন্ধ করে দেয়। তখন এডিনবরা মেলার সিইও ক্রিস পারনেল মেলা ডাইরেক্টরদের বিরুদ্ধে এমপ্লয়েমন্ট ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। এসময় বেরিয়ে আসে নানা অনিময়ের খবর। ফয়ছল চৌধুরী জিএসসি-স্কটল্যান্ড নামে একাই একটি সংঘঠন চালু করে সেই কমিউনিটি সংঘঠনের প্রতিনিধি হিসাবে নিজেকে এডিনবরা মেলার বোর্ডে তার সদস্যপদ বহাল রাখেন। তদন্তে প্রমানিত হয়, গ্রেটার সিলেট ডেভলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল- স্কটল্যান্ড রিজিওনের কার্যকরী কমিঠির সদস্যবৃন্দ জানান, ফয়ছল চৌধুরী তাদের সংঘঠনের বর্তমান সদস্য নয় এবং জিএসসি স্কটল্যান্ড নামক কোন সংঘঠনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। ফয়ছল চৌধুরী বহুবছর আগে গ্রেটার সিলেট স্কটল্যান্ড রিজিওয়ের সদস্য ছিলেন। ট্রাইবুনালের কাছে ফয়ছল চৌধুরী স্বীকার করেছেন যে, গ্রেটার সিলেট স্কটল্যান্ড রিজিওনের সদস্যপদ ত্যাগ করার পর তিনি একই নামে জিএসসি স্কটল্যান্ড নামক নতুন একটি সংঘঠন চালু করেছিলেন। যা ছিল সম্পুর্ণ ভুয়া ও প্রতারনা মুলক। এ ব্যাপার মুলধারার মিডিয়ায় ফলাও করে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এধরনের দুর্নীতির প্রমানিত হওয়ার ফলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় স্কটল্যান্ডের সর্ববৃহৎ বার্ষিক মালটিকালচারল উৎসব এডিনবরা মেলা।
এ ঘঠনায় ব্রিটেনজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সৃষ্টি হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া। এর প্রভাবে স্কটিশ মুলধারায় এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা করছেন অনেকেই।
তদন্ত চলাকালে মিডিয়ায় যুক্ত হতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ফয়ছল চৌধুরী কোন প্রতিক্রিয়া যুক্ত করা যায়নি।
লেবার পার্টি কতৃক যৌন হয়রানির তদন্ত কবে সমাপ্ত তা এখন ও জানা যায়নি। স্কটিশ আইন অনুসারে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত একজন ব্যক্তিকে নিরাপরাধ হিসাবে গন্য করা হয়। লেবার পার্টি যাবতীয় কার্যক্রম এবং আগামী মে মাসে অনুস্ঠিত নির্বাচনের সকল প্রচার কাজ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।