আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। বর্তমান সময়ে নরসিংদী জেলাসহ মাধবদী শহরের পুজা মন্ডপগুলোতে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে খুব তোড়জোড়ে। প্রতিমা সাজানোর পাশাপাশি এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মাধবদী শহরের মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে পোশাকের বাজার।
বিক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো। এদিকে পূজা উপলক্ষে মাধবদীতে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বিশেষ কালেকশন নিয়ে এসেছে মাধবদীর ফ্যাশন হাউসগুলো। আড়ং, অঞ্জনস, ইজি ফ্যাশন, টপ লাইন সহ শেখেরচর বাবুর হাটের দেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে নতুন নতুন বাহারী কালেকশন।
পূজা উপলক্ষে কাপড়ের মার্কেট ও শোরুমগুলোতে নারীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রংয়ের থ্রি-পিস, জামদানি শাড়ি, কাতান শাড়ি, লেহেঙ্গা ও তাঁতের শাড়ি। অপরদিকে ছেলেদের জন্য রয়েছে বাহারি ডিজাইনের ধুতি, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট। তাছাড়াও জুতার দোকাগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের জুতা। আরো রয়েছে বাচ্চাদের বাহারি পোশাক।
মাধবদীর স্কুল সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, নিচ তলায় শিশু ও নারীদের থ্রি-পিছের দোকানগুলোতে চলছে কেনাবেচা। মার্কেটের দোতালায় দর্জির দোকানগুলোতেও সেলোয়ার কামিজের অর্ডার দেয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে নারীরা। এ অবস্থায় অনেক দর্জির দোকান অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও জানান দোকানিরা। মার্কেট ঘুরে দেখা যায় কেউ শাড়ি কিনছে, কেউ পাঞ্জাবি, কেউ আবার কিনছে জুতা। প্রায় সবার হাতেই ছিল শপিং ব্যাগ। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
জুয়েল কুমার জনি সাহা মাধবদীর কাশিপুর থেকে এসেছেন মাধবদী স্কুল সুপার মার্কেটে পরিবারের জন্য পূজার কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, নিজের জন্য পাঞ্জাবি, স্ত্রীর জন্য একটা শাড়ি ও থ্রি-পিছ এবং মেয়ের জন্য টপস আর থ্রি-পিস কিনেছি। এখন শ্বশুর-শাশুড়ি ও বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজনের জন্য কেনাকাটা করতে হবে।
আরেক ক্রেতা কার্তিক দাস থাকেন শহরের আনন্দী এলাকায়। এবার পূজায় বাড়ির সবার জন্য পোশাক কিনেছেন। তিনি বলেন, নিজের জন্য টি-শার্ট ও প্যান্ট কিনেছি, স্ত্রীর জন্য থ্রি-পিছ, ছেলে-মেয়েদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক, মায়ের জন্য শাড়ি, বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও জুতা কেনা হয়েছে। এখনও আত্মীয় স্বজনের জন্য পোশাক কেনার বাকি।
ইজি ফ্যাশনের বিক্রেতা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার একটু ভালো বিক্রি হচ্ছে। টপ লাইনের সেলস ম্যান বলেন, আমাদের বিক্রি ভালো হচ্ছে। আজকে যে ক্রেতা এসেছে তার ৮০ শতাংশ পূজা উপলক্ষে কিনতে এসেছে।
এদিকে মাধবদী পৌর শহরের স্কুল সুপার মার্কেট, সোনার বাংলা সমবায় মার্কেট, রাইন ওকে মার্কেট, মোল্লা মার্কেট, শেখেরচর বাবুরহাট সহ বাজারের বটতলা খুচরা প্রিন্ট, কাটপিছ ও থ্রি-পিছ, শাড়ির বেশিরভাগ দোকানদার ব্যস্ত সময় পার করছেন। দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, এবারের পূজার বাজারে নারীদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের চাহিদা বেশি। কাতান, জর্জেট, সিল্ক ও এমব্রয়ডারি দিয়ে কাজ করা শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কদর রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত ও জামদানি শাড়িরও।
মোল্লা মার্কেটের শামিম বস্ত্র বিতান এর মালিক অলি উল্লাহ জানান, এবারের পুজার বাজারে নারীদের সিল্ক, তাঁত ও জামদানি শাড়ির চাহিদা বেশি দেখছি। এ বছর বিগত বছর গুলোর থেকে বেচা কেনা ভালো।
স্কুল সুপার মার্কেটের ইমিটেশনের গয়নার দোকানগুলোতেও চলছে বিক্রির ধুম। নারীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনছেন চুড়ি, গলার হার, আংটিসহ নানা রকম অলঙ্কার। পোশাকের পাশাপাশি মেয়েদের জুয়েলারি, সিঁদুর, চুড়িসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন দোকানিরা। পূজা সামনে রেখে মাধবদীতে অনলাইনের ডিজিটাল বাজারগুলোও সরব হয়েছে। অনলাইনে চলছে নানা পোশাকের প্রচারণা, সঙ্গে বিক্রিও বেশ ভালো বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অনেকে অনলাইনে ও অফলাইন দু’ভাবেই বিক্রি করছে। কোনো কোনো পেইজ দিচ্ছে কাস্টমাইজড সুবিধা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে আগামী ২ অক্টোবর। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বর্তমানে প্রতিমা সাজানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্প কারিগররা। রাত দিন কাজ করে চলছে প্রতিমা সাজানো জন্য। এছাড়াও হরদোম উৎসবের প্রস্তুতি চলছে মাধবদী ও আশপাশের সনাতন ধর্মীয় পুজা মন্ডপগুলোতে।
Leave a Reply