মু. সাইফুল্লাহ রায়হান : সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত হাজার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবন আজ এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা “ট্রান্সফার ভিসা” ব্যবস্থার কারণে বহু প্রবাসী বৈধ কাগজপত্র হারিয়ে অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন, কেউ চাকরি হারাচ্ছেন, আবার অনেকে বাধ্য হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন।
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত বাংলাদেশি নাগরিকদের শিক্ষাগত সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা ও দালালচক্রের অপকর্মের কারণে ইউএই সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে সাধারণ পরিশ্রমী প্রবাসীর জীবনই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভিসা পরিবর্তন ও নবায়নে অচলাবস্থা – বর্তমানে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রবাসীরা নবায়ন করতে না পেরে আইনি জটিলতায় পড়ছেন। জরিমানা দিতে না পারলে অনেকেই অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। এতে শুধু কর্মজীবন নয়, প্রবাসে টিকে থাকার স্বপ্নও ভেঙে যাচ্ছে।
সাপ্লাই কোম্পানির সংকট-
বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কাজ করেন কনস্ট্রাকশন ও সাপ্লাই কোম্পানিতে। সাধারণত তারা এক কোম্পানির ভিসায় বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু ট্রান্সফার ভিসা বন্ধ থাকায় এই ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বড় কোম্পানিগুলোও এখন বাংলাদেশিদের নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করছে, কারণ তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
প্রবাসীদের করুণ বাস্তবতা-
একজন প্রবাসী বলেন, “আমরা এখন দেশহারা হয়ে আছি। কাজ নেই, ভিসা নবায়ন করতে পারছি না। প্রতিদিন অপেক্ষা করি, কখন ভিসা চালু হবে। কিন্তু এর সমাধান কবে হবে, কেউ জানে না।”
শত শত বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ হারিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। পরিবারে টাকা পাঠানো তো দূরের কথা, নিজেদের মৌলিক খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। হতাশা ও অনিশ্চয়তা তাদের দিনগুলোকে গ্রাস করছে।
দালালচক্র ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড- প্রবাসীদের এই সংকটকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ভিসা বা কাজের প্রতিশ্রুতি দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অনিয়ম, সার্টিফিকেট জালিয়াতি, এমনকি নারী পাচারের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে কিছু অসাধু চক্র জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা-
এই ভিসা জটিলতা শুধু প্রবাসীদের নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও একটি বড় ধাক্কা। প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। ভিসা সংকটে আয় কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
প্রবাসীদের একমাত্র আশা-
প্রবাসীরা আশা করছেন, বাংলাদেশ সরকার দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেবে এবং ইউএই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে ট্রান্সফার ভিসা পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করবে। নাহলে হাজার হাজার পরিবার অচল হয়ে পড়বে, যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
Leave a Reply