নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ এলাকায় গভীর রাতে একটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে দুর্গাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে সকাল থেকেই অগনিত ব্যাক্তি দুঃখ প্রকাশ সহ নানান মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করছেন (ফেসবুক) সোশ্যাল মিডিয়ায়। দোষীব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) গভীর রাতে জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউড় আখড়ায় মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মন্দির কমিটি জানায়, মন্দিরে গতকাল রাতে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা মন্দিরে ঘুমিয়ে যান। পরে বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, প্রতিমা ভাঙচুর করা। পরে মন্দির কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি জানালে তিনি বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। পরে সকালে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা সহ অনেকেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গোপীনাথ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব দাস বলেন, আমরা দোষীদের বিচার চাই। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে তাদের চিহ্নিত করা হোক।
পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত পন্ডিত(শুভ) বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টির সুরাহা চাই। আমরা বিশ্বাস করি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে।
শ্রী গোপীনাথ জিউড় আখড়ায় মন্দিরে সাধারণ সম্পাদক সজীব সাহা বলেন, এ ঘটনার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শ্রী গোপীনাথ জিউড় আখড়ায় মন্দিরে সভাপতি লিটন সরকার বলেন, রাতের শেষের এক সময় দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন অনেকেই।
ফেসবুকে শতশত মন্তব্যকারীর মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির পলাশ লিখেন- অবশ্যই ঘটনাটি নিন্দনীয়, শাস্তিযোগ্য। কিন্তু, এখন পর্যন্ত বক্তব্যটি পরিস্কার নয়।
কিশোরগঞ্জের গোপিনাথ জিউর আখড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উপাসনালয়। তার উপর কিশোরগঞ্জের মতো শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান প্রিয় এলাকায় এ ধরনের ঘটনা, সবাইকে আশ্চর্য করেছে।
দূর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মন্দিরেই কম বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যেমনটি সাধারণভাবেই যে কোন বড় জমায়েত বা অনুষ্ঠান কে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়, তা পারিবারিক, সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠানই হোক। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটেতো এটা জরুরি।
গোপিনাথ জিউর আখড়ায় অবশ্যই সি সি ক্যামেরা থাকার কথা এবং সেই সাথে পূজা উদযাপন কমিটির পাহারাও। আমি যতদূর জানি, মন্দিরের আশেপাশের এলাকায়ও অনেক প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে সিসি ক্যামেরা আছে। পাশাপাশি শহরের সাধারণ পাহারাদারও আছেন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে কেবল বর্ণনাহীন নীরব ছবি, ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। প্রতিমা ভাঙার ঘটনাটি কিন্তু কেউ বলছেনা। দুর্বৃত্তরা মন্দিরের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিভাবে অতিক্রম করলো বা ফাঁকি দিলো, সেটা জানা জরুরি। এটা কি ঠান্ডা মাথায় একা কোন ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, নাকি সংঘবদ্ধ কোন দুর্বৃত্ত দল ঘটনাটি ঘটিয়েছে ? মন্দির পাহারায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাথে তাদের কোন বাদানুবাদ, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কি ? এ সময়টাতে চব্বিশঘন্টাই কাজের প্রয়োজনেই কেউ না কেউ প্রতিমার আশে পাশে থাকেনই এবং থাকাটা বাধ্যতামূলকও।
সাম্প্রতিক উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকা মানেও এক ধরণের চক্রান্ত ও অন্যায়। জেলা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, দুর্বৃত্তদল কোথাও না কোথাও, কারো না কারোও চোখে তার প্রমাণ রেখে যাবে। তবে, আমি ঘরের শত্রু বিভীষণকেও সন্দেহ তালিকার বাইরে রাখিনা।
পূজা মন্ডপের দায়িত্ব প্রাপ্তগণের কাছে সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি।
আর অপরদিকে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী এমন ন্যাক্ষারজনক ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবীতে, দুপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের লোকজন শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঘেরাও করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। পরে, পুলিশ সুপার ও উর্ধতন সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে ফিরে আসে বিক্ষোভকারীরা।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এমন নাশকতাকারীকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তের মাধ্যমে অবশ্যই অপরাধীদের খোঁজে বের করা হবে। আর এবিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Leave a Reply