শফিক কবীর :কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া গাছবাজার এলাকার বাসিন্দা ৭৫ বছরের বৃদ্ধা সখিনা খাতুন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বুকে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার ছেলে আ: রহিম দ্রুত নিয়ে আসেন কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক সদর হাসপাতালে।
কিন্তু সেখানে কোন কার্ডিওলজি বা নিউরো বিশেষজ্ঞ না থাকায় যশোদল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে বাধ্য হন স্বজনরা। শহরের অসহনীয় ট্রাফিকজ্যাম মোকাবিলা করে জরুরী বিভাগে পৌঁছালে, কর্তব্যরত চিকিৎসক একটি ঔষধের জন্য রোগীর ছেলেকে বাহিরে পাঠান, ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঠলে পরেন সখিনা, ঔষধ নিয়ে ছেলে এসে দেখেন তার মা চলে গেছে নাফেরার দেশে।
ছেলেটি অভিযোগ করে বলেন, সময়মত সদর হাসপাতালে আমার মায়ের চিকিৎসা হলে আজ হারাতে হতোনা মাকে।
একই অভিযোগ কিশোরগঞ্জ শহরের পুরানথানার বাসিন্দা গোলাম হোসেনের। তিনি বলেন, একি সমস্যায় আমার ছোট ভাই এডভোকেট রেনুকে ভোর রাতে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই, ফিরে আসি ভাইয়ের লাশ নিয়ে।
তাদের মতো কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে একই ভোগান্তিতে পড়ছেন পার্শ্ববর্তী নান্দাইল, আঠারবাড়ী, কেন্দুয়া সহ আসেপাশের রোগী ও স্বজনরা। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে ৬৫ চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৫৫ জন। ১০ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চক্ষু, নাক-কান গলা ও কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগে আগত রোগী ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
এছাড়াও হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনেও ত্রুটি রয়েছে, অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই। এ কারণে প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অস্ত্রোপচার ও মেডিকেল টেস্ট করতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অন্যান্য পদে জনবল পদায়ন হচ্ছে না। ফলে জেলার লোকজন চিকিৎসাসেবায় বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, অত্র ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ১৮০০-২০০০ রোগী বর্হি বিভাগে সেবা গ্রহন করে থাকেন এবং ৩০০-৪০০ রোগী ভর্তি থাকেন। তার মধ্যে অধিকাংশ রোগীই নাক, কান, গলা, চক্ষু ও শ্বাস কষ্ট রোগের সমস্যা নিয়ে আসেন। হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগ, চক্ষু বিভাগ ও কার্ডিওলজি বিভাগের অনেক ভারী যন্ত্রপাতি রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত পদগুলো শূণ্য থাকায় অপারেশনের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের অনুউপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা.মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন – আমি নতুন এসেছি, এরপরও ‘হাসপাতালে বিভিন্ন শূন্য পদে চিকিৎসক পদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গত ২৪ মার্চ লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের ২৫০ শয্যা সকল হাসপাতালে রয়েছে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস বেড। কিন্তু এখানে সেটা নেই। তাছাড়া হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটিও অনেক পুরাতন চলছে লক্কর ঝক্কর ভাবেই। আমি সব বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি আশা করছি কোন না কোন ব্যাবস্থা হবে।
Leave a Reply