নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জে জমি সংক্রান্ত পুর্ব বিরোধে, পিতা-পুত্র তথাকথিত সমন্বয়ক পরিচয়ে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন (দ্রুত বিচার) আদালতে হয়রানি মূলক মিথ্যা, ভুয়া ও গায়েবী মামলা দায়ের ও চাদাঁবাজীর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপিপন্থী ভুক্তভোগী পরিবার।
১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বেলা বারোটায় জেলা পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন – জাতিয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, মিঠামইন উপজেলার ঠাকুর বাড়ির সন্তান আরিফ ঠাকুর।
তিনি বলেন – আমি অত্যন্ত ক্ষোভ, ঘৃণা ও লজ্জা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি কিছু কথা বলতে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন সাবেক ছাত্র। একই সাথে আমি বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্রনেতা। আমি ঢাকাস্থ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সংস্থার ২০০৭-২০০৯ মেয়াদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১/১১ ফখরুদ্দিন- (মইনুদ্দিন সরকার বিরোধী আন্দোলনে এবং পরবর্তীতে ২০-২২ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেই। ঐ সময়ের বিভিন্ন মিডিয়া ফুটেজ খুঁজলে আশা করি এর সত্যতা পাবেন। পরবর্তীতে আমি র্যাব কর্তৃক গুম ও গ্রেফতারের শিকার হয়ে প্রায় ৩৬ দিন জেলবন্দী ছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরদিন ঢাকার শাহবাগ মোড়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক ব্যাপক গণপিটুনির শিকার হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলাম। শুধুমাত্র ছাত্রদল করার অপরাধে আওয়ামী শাসন আমলে কোনদিন ক্যাম্পাসে ক্লাসে যেতে পারি নি। পুলিশ ও সাদা-দলের শিক্ষক নেতাদের (প্রফেসর সদরুল আমিন, প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, প্রফেসর আহমেদ বশির) সহায়তায় ইয়ার লস দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করি। মেধা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ছাত্রদল করার অপরাধে কয়েকবার পিএসসির ভাইবা দিয়েও কোনো চাকুরী পাই নাই।
আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার আপন বড় ভাই আশরাফ উদ্দিন ঠাকুর টিপু ঘাগড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, পরবর্তীতে মিটামইন উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা কালীন আওয়ামীলীগ সরকারের অসংখ্য ভুয়া ও গায়েবী মামলা নিয়ে ২০০০ সালে দেশ ছেড়ে গ্রীসে চলে যান। বর্তমানে আমার বড় ভাই গ্রীস বিএনপির সদস্য সচিব। আমি একজন মুক্তমনা বিপ্লবী চেতনার অধিকারী ব্যক্তিত্ব। চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে আমি শুরু থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। আমি বনশ্রী ই, এফ ও জি ব্লকের ফোকাল পয়েন্ট ফরাজী হাসপাতাল অংশে জনতার অর্গানাইজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করি।
এক দফা ঘোষনার দিন আমি বিশাল মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যাই যা ইত্তেফাক ডিজিটাল সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে।
দেশ স্বাধীনের পর ট্রাফিকিং, এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন, বন্যার ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ এমনকি রামপুরা থানায় পুলিশী কার্যক্রম শুরুর সময় লোকাল ভলান্টিয়ার হিসাবে আমি কাজ করেছি। বিচারিক ক্যু প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সচিবালয়ে আনসার বিদ্রোহ দমনে আমি সামনের সারিতে ছিলাম যা দেশ টিভি, এস এ টিভিসহ অনেক মিডিয়ায় এসেছে।
ঘটনার দিন বিগত ০৪/০৮/২০২৪ ইং তারিখে আমি সকালে বনশ্রী এবং দুপুরের পর থেকে শাহবাদ মোড়ে আন্দোলনে ছিলাম। যা আমার মোবাইল লোকেশন ০১৭১৫৪৭৭৬০০ এবং আমার ফেইবুক পাওয়া যাবে। ঘটনার স্থান বাজিতপুর উপজেলার জ্ঞানপুরে আমার শ্বশুড় বাড়ি, আমি সর্বশেষ কুরবানির ঈদের পরদিন আমি শ্বশুড় বাড়ি গিয়েছিলাম।
গায়েবি মামলার ১০ নম্বর আসামী সাকিব মিয়া (৩০) আমার স্ত্রীর বড় ভাই একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং ঘটনার দিন উনি উনার কর্মস্থল পুলিশ হেড কোয়ার্টারস এ কর্মরত ছিলেন। মামলার ১২ নম্বর আসামী সাইমন (২৫) আমার শ্যালক। মামলার ৬ নম্বর আসামী মোঃ নভেল মিয়া (২৫) বাংলাদেশ রেলওয়ে তে কর্মরত এবং ঘটনার দিন উনি উনার কর্মস্থল আখাউড়া জংশনে কর্মরত ছিলেন।
মামলার বাদী নাসির এবং সাক্ষী শরীফ ৫ আগস্টের পর থেকেই আমার শ্বশুড় অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সর্বজন শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল আওয়াল সহ মামলার অন্যান্য আসামী এবং এলাকার বিভিন্ন নিরীহ মানুষের জমি বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। মামলার পর থেকেই সকল আসামী প্রাণের ভয়ে বাড়িঘর ছাড়া হয়েছেন। ৩ নং স্বাক্ষী আমিনুজ্জামান শরীফ নিজেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সহ সভাপতি পরিচয় দিয়ে আসামী কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে আসামী প্রতি ৩-৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে। অন্যথায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
আপনারা জানেন ০৫ আগস্টের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অসংখ্য ব্যাক্তি এবং সংগঠন নিজেদের আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলসহ নানাবিধ অপকর্ম করছে। আমরা জানি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি ছাড়া অন্য কোন সমন্বয়ক বৈধ না। একই পরিবারে পিতা-পুত্র উভয়েই সমন্বয়কেরমত ঘটনা যেমন বিরল তেমনি সারাদেশে কোথাও কোন সমন্বয় কারো বিরুদ্ধে মামলার বাদী হয়েছে এই প্রমান আপনারা দিতে পারবেন না।
মামলার বাদী এডভোকেট মো: আহসানুজ্জামান নাসির কিংবা স্বাক্ষীদের আমি চিনি না এবং কখনো দেখিও নাই। শুনেছি মামলার বাদী এবং স্বাক্ষীগণ পরস্পরের রক্তের আত্মীয়। বাদী নাসির এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ হিসাবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে কিশোগঞ্জ শহর হতে ২০/২৫টি মটর সাইকেল করে অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে গিয়ে এলাকায় বিভিন্ন কিংবা প্রতিপক্ষের লোকজনের উপর নির্যাতনের বহু ঘটনা আপনারা জ্ঞানপুর পরিদর্শনের গেলে জানতে পারবেন। তার নামে কিশোগঞ্জ সদর মডেল থানা ও বাজিতপুর থানায় অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। উক্ত মামলার বাদী এবং স্বাক্ষীরা এলাকার নিরিহ মানুষের জমি দখল, বাড়িঘর ভাংচুর সহ নানাবিধ অপরাধের সহিত জড়িত আছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট আসামী নম্বর ৮ আব্দুর রহিম (৫০) এবং ৯ নম্বর আসামী উম্মি (৩৫) এর বাড়িতে বাদী নাসির এবং স্বাক্ষী শরিফের নেতৃত্বে লুটপাট ও ভাংচুর হয়। বাজিতপুর সেনা-বাহিনীর কাছে নির্যাতিতরা অভিযোগ করলে সেনাবাহিনী গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায় এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ৩ দিনের মধ্যে ঘরবাড়ি পূর্ণসংস্কার করে দেওয়ার ওয়াদা করে এবং নির্যাতিতের কাছে প্রকাশ্যে নিঃস্বার্থ ক্ষমা চায়।
বর্তমান সময়ে সমন্বয়করা আমাদের আবেগ অনুভূতি, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার জায়গা। সারাদেশে কোন সমন্বয়ক কোথাও কোন মামলার বাদী হয়েছে এমন প্রমান আপনারা দিতে পারবেন? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের জীবন বাজী সংগ্রামে অন্যতম বারুদ ছিলো গুম, খুন, গায়েবী ও মিথ্যা মামলা দেওয়া। আমাদেরই ২য় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে আপনারদের মাধ্যমে জাতির কাছে বলতে চাই হাজার প্রানের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান স্বাধীনতার চেতনা কতিপয় চাঁদাবাজ, মামলা ব্যবসায়ী, অসাধু চক্রের অপকর্মের কারণে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এই সব গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানি করা পতিত স্বৈরশাসক খুনি হাসিনার পলিসি যা আমাদের ২য় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আমি জাতির কাছে ন্যায় বিচার আশা করি।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ও গ্রীস বিএনপির আহবায়ক আশরাফ উদ্দিন ঠাকুর প্রমুখ। বক্তাগণ উক্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সঠিক তথ্য উদযাটনের দাবী জানান।
Leave a Reply