নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্র দখল – ব্যালট বই লুটপাট – ভোট কারচুপি অনিয়ম ও নৌকায় সীল মারার ভিডিও ভাইরাল – রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত বিবরণীতে গড়মিল। এসব অভিযোগে নির্বাচনের ফল প্রকাশের প্রায় আড়াই বছর পর পুনরায় একটি কেন্দ্রের ভোট গণনার সিদ্ধান্ত হয় নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে।
১৪ জুলাই রবিবার কিশোরগঞ্জ সদর নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র সহকারী বিজ্ঞ বিচারক মো: সিরাজুল ইসলাম আগামী ২৯ জুলাই একটি কেন্দ্রের ভোট পুনগণনার আদেশ প্রদান করেন।
২০২১ সনের ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ২ নং গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘোষিত ফল বাতিল এবং ভোট পুনর্গণনার আদেশ চেয়ে কিশোরগঞ্জ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে (০৭/২০২২) নং একটি মামলা করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম তুহিন।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালের এক আদেশে গত ৩/৩/২৪ ইং গণনার কথা থাকলে বিবাদী সৈয়দ মাসুদ ট্রাইব্যুনালের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে আদালত ২৮/২/২৪ স্থগিতাদেশ দেন। এবং ১২/৬/২৪ পুর্বের আদেশ বহাল রেখে রায় প্রদান করেন।
পরবর্তীতে দীর্ঘ পর্যালোচনায় ১৪/৭/২৪ বিজ্ঞ আদালত আগামী ২৯ জুলাই ভোট পুনগণনার আদেশ প্রদান করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, করিমগঞ্জ উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফলে ৮ টি বাতিল ভোট সহ দেখানো হয় ৩২০৮ ভোট। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত বিবরণীতে এই সংখ্যা ছিল ৩২০০ ভোট। দুই ধরনের তথ্য থাকায় ঘোষিত এই ফলাফলে অনাস্থা জানিয়ে প্রতিকার পেতে প্রথমে উচ্চ আদালতে যান তুহিন। পরবর্তী সময়ে পুনর্গণনার আবেদন করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম তুহিন।
তুহিন সকল কেন্দ্রের ব্যাপক অনিয়ম ত্রুটি বিচ্যুতির অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান পদে পুনঃ ভোট গণনার দাবী করে রিটানিং অফিসার বরাবরে ১৬/১১/২০২১ তারিখে একটি লিখিত আবেদন করেন এবং, কর্মকর্তা তা ঐ দিনই গ্রহণ করেন। কিন্তু আবেদনকারীর দাবীর ব্যাপারে কোন বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তড়িঘরি করে ঐ চূড়ান্ত ফলাফল নির্বাচন কমিশন সচিবালায়ের নির্বাচন প্রসাশন শাখায় পাঠিয়ে দিলে নির্বাচন কমিশন বিগত ০৫/১২/২০২১ তারিখে গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কিত গেজেট প্রকাশ করে ঐ তারিখে গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ১নং বিবাদী সৈয়দ মাসুদ এর নাম বিজয়ী বলে প্রকাশ করেন।
হাফিজুল ইসলাম তুহিন বলেন, ২ নং গুজাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাইধনখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্র দখল, ব্যালট বই লুটপাট, ভোট কারচুপি অনিয়ম ও নৌকায় সীল মারার ভিডিও ভাইরাল, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত বিবরণীতে গড়মিলে গণনায় অস্বচ্ছতার ছাপ স্পষ্ট ছিল। তাই আমি ট্রাইব্যুনালে গিয়েছি।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ভোট গ্রহণের জন্য ১০টি কেন্দ্র ছিল। এরমধ্যে হাইধন খালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৩৫৩টি। উক্ত ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ যথাযথ ভাবে শুরু হলেও আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মাসুদ সহ তার গুন্ডা বাহিনী নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাদী সহ সকল এজেন্টদেরকে বের করে দেয়। এবং কেন্দ্রের দরজা লাগিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের যোগসাজসে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ৩৩৫৩ ভোটে মধ্যে ৩০৩৮ ভোট দেখানো হয়। এতে ঐ কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থী এবং মেম্বার প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়। তাতে, হাতপাখা প্রতীকে ১৫ ভোট, আনারস প্রতীকে ০০ ভোট, মোটর সাইকেল প্রতীকে ০৪ ভোট, চশমা প্রতীকে ১৪০ ভোট এবং নৌকা প্রতীকে ৩০৩৮ ভোট দেকানো হয়েছে। যার পার্সেন্টেজ দাড়ায় চেয়ারম্যান পদে ৯৬% এবং মেম্বার পদে ৭৩% এবং সরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট প্রদানে হার ও গড়মিল। হাইধন খালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ৩৩৫৩ ভোটের মধ্যে ৪% এর অধিক ভোটার মৃত্যুবরণ সহ চাকুরীর সুবাদে বাহিরে ও নির্বাচনে দায়িত্বে পালন করেন। এবং রিটার্নিং অফিসারের তথ্য বিবরণীতে নৌকা প্রতীকে ৩০৩৮ ভোট ও বাদীর চশমা প্রতীকে ১৪০ ভোট এবং ৮ টি ভোট বাতিল দেখিয়ে ৩২০৮ কাস্টিং দেখানো হয়েছে। এতেই ঐ কেন্দ্রের ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
ট্রাইব্যুনাল আমার চাওয়ার গুরুত্ব দিয়েছে এবং সাক্ষী প্রমাণে সবকিছুর সত্যতাও পেয়েছে। এখন ফলাফলের অপেক্ষা।
Leave a Reply