নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গি হামলার আজ আট বছর পূর্ণ হলেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। এখনও বিচারের অপেক্ষায় আছেন নিহতদের স্বজনেরা। শোক ও স্রদ্ধায় স্মরণ করেন বিশিষ্টজনেরা।
রোববার (৭ জুলাই) সকালে জঙ্গি হামলার স্থল শোলাকিয়া মুফতি মোহাম্মদ আলী মসজিদের সামনে নিহত দুই পুলিশ সদস্যের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ। এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক হোসেন ও মো. নূরে আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (অপরাধ) আল-আমিন হোসাইন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিলকিছ বেগম ও জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ সদস্যের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ‘নিজেদের জীবন দিয়ে সেদিন পুলিশ সদস্যরা জঙ্গিদের প্রতিহত করেছিলেন। নাহয় আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হয়েছে। আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলার বিচারকাজ চলছে। এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত জঙ্গিদের নিরাপত্তাজনিত কারণে এতদিন আদালতে হাজির করা যায়নি। তবে সম্প্রতি তাদের হাজির করা হচ্ছে আদালতে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ছিল ঈদুল ফিতরের দিন। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের জন্য সমবেত হয়েছিলেন মুসল্লিরা। নামাজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে জঙ্গিদের গুলি আর বোমায় কেঁপে ওঠে ঈদগাহের চারপাশ।
ঈদগাহের কাছে আজিম উদ্দিন স্কুল সংলগ্ন মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জঙ্গি আবির রহমান।
২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের বিভীষিকাময় এই স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি এলাকাবাসী। তারা বলছেন, সেদিন জঙ্গিরা পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করে। মসজিদের দোতলা থেকে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
সেদিন নিজের ঘরের ভেতরে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক। ঘটনার বিচার পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হয়নি তাঁর স্বজনদের।
ঝর্ণা ভৌমিকের ছেলে বলেন, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই মারা গেছেন তার মা। আর গত ১৮ জুন মারা যান তার বাবা। বেঁচে থাকতে তার মা হত্যার বিচার তার বাবা দেখে যেতে পারলেন না। এই নিয়ে তার স্বজন ও ছেলের মনে অনেক বড় আক্ষেপ রয়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু নাসের মো. ফারুক সঞ্জু বলেন, ‘এই আসামিরা হলি আর্টিজান মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাদেরকে আমরা কোর্টে উপস্থিত করতে না পারা আমাদের ব্যর্থতা নয়। আইনের কারণে আমরা সাক্ষী নিতে পারিনি। ইদানিং বিশেষ কায়দায় তাদেরকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে এনে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করি। এরইমধ্যে ১০২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষী নেওয়া হয়েছে। মামলাটি এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই তা শেষ হবে বলে আশা করি।
Leave a Reply