নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের বাজার সয়লাব ভারতীয় চোরাই চিনিতে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় চিনিতে এখন এমন অবস্থা জেলা শহর থেকে উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজার এবং গ্রামের সাধারণ দোকানেও এসব চিনি।
জেলা শহরের পাইকারি বাজার বড় বাজারেই দৈনিক এক থেকে দেড় কোটি টাকার চোরাই চিনি কেনাবেচা হয় বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন পথে চোরাই চিনি ট্রাকে করে প্রহরায় জেলা শহরে প্রবেশ করাচ্ছে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতির ঘনিষ্ঠরা।
গত শুক্রবার চোরাই চিনির এমনই একটি চালান পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিতে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার ভাগ্নে নাজমুল হীরা সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রাকে চিনি ছিল ২৩০ বস্তা। ট্রাকটি শহরের নগুয়া এলাকার তালতলা থেকে পুলিশ আটক করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে মামলার দুই আসামি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার ৩নং আসামি জনি। তিনি জেলা শহরের নিউটাউন এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে। জানাগেছে জব্দ হওয়া চোরাই চিনির ট্রাকটি জনির। এ নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মোল্লা সুমনকে উদ্দেশ্য করে একটি পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন,‘কিশোরগঞ্জে ভারতীয় চোরাই চিনির ব্যবসা করে কে, আর মামলা হয় কার নামে! এই ক্ষমতার খেলা আর বেশি দিন দেখাইতে পারবেন না জনাব। এবং মামা-ভাগনের কিছু স্কীনসটও প্রকাশ করে।
শহরের মানুষের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও এ চোরাচালান চক্রের সাথে যুক্ত। তাদের সহযোগিতা ছাড়া চোরাচালানের চিনি কয়েকটি উপজেলা পার হয়ে জেলা শহরের বড়বাজার পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব নয়।
এব্যাপারে জেলা বাজার কর্মকর্তা শিখা বেগম বলেন, ‘ভারতীয় চিনিগুলো খুব নিম্নমানের। এগুলো খেলে মানুষ অসুখ-বিসুখে পড়বে। চিনিগুলো যেন বাজার থেকে সরানো যায় এ ব্যাপারে আমরা তৎপর হচ্ছি।’
কিশোরগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত থেকে চিনিবোঝাই ট্রাক ভৈরব হয়ে, নেত্রকোনার কলমাকান্দা থেকে কেন্দুয়া হয়ে নান্দাইল দিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরে এসে প্রবেশ করে এবং সিলেট সুনামগঞ্জ শ্রীমন্ত দিয়ে আসা চিনিগুলো করিমগঞ্জের চামড়া বন্দর হয়ে জেলা শহরে আসে। তবে সবচেয়ে বেশি চিনি আসে চামড়া বন্দর দিয়ে।
বড়বাজার এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চোরাচালান হয়ে আসা ভারতীয় চিনির কারণে কিশোরগঞ্জে বৈধ চিনির আমদানি অনেকটাই কমে গেছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। জানা গেছে, প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ টি ট্রাক আসে। একেকটি ট্রাকে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ বস্তা চিনি থাকে। সে হিসাবে কমবেশি দেড় থেকে দুই হাজার বস্তা ভারতীয় চিনি এখানে বেচাকেনা হয়। এর বাইরে শহরের কাচারিবাজার, পাকুন্দিয়া বাজারেও প্রতিদিন অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ বস্তা চোরাই চিনি এখানে আনা হয়।
ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগে পুলিশ সদস্যদের ‘ম্যানেজ করে’ সড়কপথে ভৈরব ও নান্দাইল দিয়ে এবং নৌপথে চামড়া বন্দর দিয়ে ভারতীয় চিনি জেলা শহরে আসা হতো। তখন খুব কম সংখ্যক চিনি আসতো। বছর ধরে ছাত্রলীগের কয়েকটি পক্ষ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে চিনির ট্রাক ভৈরব-কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী মোটরসাইকেলের পাহারায় এসব ট্রাক বড় বাজারে নিয়ে আসে। একইভাবে নেত্রকোনা থেকে নান্দাইল দিয়ে আসা চোরাই চিনির ট্রাকগুলোর কিছু পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর ও কিছু গাইটাল এলাকা হয়ে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী পাহারা বসিয়ে বড় বাজারে নিয়ে আসেন। আর এই কাজে নেতৃত্বে দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এস এম তৌফিকুল হাসান সাগর।
এ ব্যাপারে মোল্লা সুমন বলেন,‘আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না, আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছে কেউ কেউ। চোরাই চিনির ট্রাক আটক হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি মামলাও হয়েছে। চোরাইয়ের সাথে আমি যদি সম্পৃক্ত থাকতাম তাহলে তো আমার নামও থাকতো। আমাকে কি কেউ সরাসরি পেয়েছে? সিসি ক্যামেরায় পেয়েছে?
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো: রাসেল শেখ বলেন, ‘চিনি চোরাচালান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। আর কঠোর অবস্থানে আছে বলেই অভিযানে চিনি জব্দ হচ্ছে। যারাই এসব চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত আমরা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করবো।
Leave a Reply