নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জে গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপদাহে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা। ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া নিউমোনিয়া, পানি শূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গরমের সময় যে কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে দেখা যায় তার মধ্যে ডায়রিয়া অন্যতম। তবে কিছুটা সতর্ক হলেই এ রোগ থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব।
ডায়রিয়া সারাবছরের একটি রোগ হলেও প্রতিবছর গরমের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হাসপাতালগুলোতে আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়তে শুরু করে ডায়রিয়া রোগী।
কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এম আর সি পি এস (গ্লাসগো), আর.পি.(মেডিসিন) (মেডিসিন ও গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ, এমবিবিএস, বিসিএস, এমডি (হেপাটোলজী) ডাঃ মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞার মতে, ডায়রিয়া মূলত পেটের অসুখ, দূষিত পানি বা পচা খাবার থেকে পেটের পীড়া দেখা দেয়।
পানি বেশি দূষিত হয় গরমের সময়, সেই পানি পান করলে ডায়রিয়া বা কলেরা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়া হলে খুব দ্রুত শরীর থেকে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে গিয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত দেখা দেয়।
ডায়রিয়ায় বিশেষ করে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর দুই বছরের নিচে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হল, রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। গরমে যেসব কারণে ডায়রিয়া হয়- বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। সাধারণত গরমে প্রচণ্ড পিপাসায় অনেকেই রাস্তাঘাটের শরবত, পানি পান করে থাকেন। অস্বাস্থ্যকর এইসব খাবার-দাবারকে ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়। এবং অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করা। অপরিছন্ন দোকান বা অপরিছন্ন রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া। বাসি, পঁচা খাবার খাওয়া।
তবে কারোও ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে। খাবার স্যালাইন আমরা ঘরেই তৈরি করে নিতে পারি, এক গ্লাস পরিষ্কার ফুটন্ত ঠান্ডা পানি, একচিমটি লবণ ও একমুঠো চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিতে হবে।
তাছাড়া ঘরে তৈরি তরল খাবার, ডাবের পানি, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি শিশুদের বুকের দুধও খাওয়াতে হবে। সেই সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করতে হবে।
এই প্রচন্ড তাপদাহে ডায়রিয়া থেকে বাঁচাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রুদ্রে বের না হওয়া,খাবার আগে সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে, মাছি থেকে সাবধানে থাকতে হবে এবং রান্না করা খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে, ঘরের পঁচা-বাসি খাবার ও রাস্তাঘাটের শরবত,পানি,খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশু সহ ২৫/৩০ জন, অপরদিকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৩০/৪০ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলার ১৪টি সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৯৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪৫ জন এবং জেলার অন্যান্য হাসপাতালে ২০ জন ভর্তি আছেন।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের ডাক্তার-নার্সগণ নিয়োজিত আছেন। বেডের কিছুটা সমস্যা থাকলেও সকল ধরনের প্রয়োজনীয় ওষুধের কোন সংকট নেই। তিনি আরো বলেন, এই গরমে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের বিশেষ যত্ন ও সতর্কতার সহিত চলাচল, সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার ও প্রয়োজনে একাধিক বার গোসল করতে পরামর্শ এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার ও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যেতেও আহ্বান জানান।
Leave a Reply