মোঃ আল আমিন, নরসিংদী, নরসিংদীর আলোকবালী ইউনিয়নের চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসায় ফরম ফিলাপ ফি বোর্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের বিরুদ্ধে। এতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দাখিল (এসএসসি সমমান) এর ৫৭ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আজ বৃহস্প্রতিবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট দেয়া লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসার অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর কবির হোসেন, ২০২২-২৩ বর্ষের ২২ জনের ফরম ফিলাপ এবং ২০২৩-২৪ বর্ষের ৩৫ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন ফি মাদ্রাসা বোর্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের ফরম ফিলাপ সম্পূর্ণ করা যায়নি। এতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তিন সদস্যের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা মাদ্রাসার ফান্ড থেকে আত্মসাৎ করেছেন অফিস সহকারী। তাছাড়াও ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী শিক্ষার্থীদের গত বার্ষিক পরীক্ষার ফি ও বেতন আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও মাদ্রাসার বিভিন্ন কাজে অনিয়ম সহ ২৪ টি অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
দাখিল পরীক্ষার্থী রাহিম সিকদার বলেন, ” গত সোমবার জানতে পেরেছি বোর্ডে আমাদের রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেয়া হয়নি। গত ৩০ নভেম্বর ছিল ফি জমাদানের শেষ তারিখ। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদান করা হলেও আমাদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে আমাদের জীবন হতে একটি বছর নষ্ট হতে চলেছে। গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করছি। প্রবেশপত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট বেনজির আহমদ বলেন, “আমরা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গত মঙ্গলবার থেকে নিজের পকেট থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করার জন্য যোগাযোগ করেছি। কিন্তু বৃহস্স্পতিবার পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করতে পারিনি। এখনও অনিশ্চিত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে পারবে কী না। তবে, আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”
তিনি আরও বলেন, “অভিযুক্তের বিষয়ে তদন্ত ও সভা আহবান করে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সুপারিশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছি। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী এ সমস্যার সমাধান হবে।”
চরমাধবপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, “অভিযুক্ত কবির হোসেন স্থানীয় হওয়ায় সবার সাথে প্রভাব খাটায়। আমরা জানতে পেরেছি সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। নামে বেনামে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অযৌক্তিক ফি আদায় করেছে। নানা অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছে সে।
তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগও রয়েছে। একাধিকবার তার বেতন বন্ধ করেছি, কিন্তু সে নিজেকে শোধরাচ্ছে না। আমরা প্রশাসনকে লিখিত আকারে জানিয়েছি, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।”
অভিযুক্ত কবির আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশাবাদী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রবেশ পত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবো। বৃহস্পতিবার বিকালে ফি বোর্ডে জমা দিয়েছি। আর অন্য সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।”
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন বলেন, ” লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এর আগে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত থাকার সত্যতা পেয়েছি। তার বিষয়ে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিবো। যাদের পরিক্ষায় বসা নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে, তাদেরকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।”
Leave a Reply