নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
গত ১৯ সনের ১৫ আগস্ট সীমিতভাবে যাত্রা শুরুকরে হাসপাতালে বহির্বিভাগের কার্যক্রম।
এরপর ২০ সনের (১৭ মার্চ) মুজিববর্ষের প্রথম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
যা পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করা হয় প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর।
মেডিকেলটি চালু হওয়াতে এলাকার মানুষ নতুন করে উন্নত চিকিৎসাসেবার পথ খুঁজে পায়। কিশোরগঞ্জ বাসীর স্বপ্ন ছিলো উন্নত চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাধ্যমে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজও স্বপ্নই রয়ে গেল বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায়, প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা। তার উপর দালাল চক্রের অপতৎপরতায়। এতে জড়িত রয়েছে, কতিপয় চিকিৎসক, সেবিকা ও আউটসোর্সিং কর্মচারী। তাদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে সম্প্রতি একটি দালাল চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে রয়েছে অভিযোগ। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। আর এভাবেই চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন তারা। সর্বস্ব হারিয়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিতও হচ্ছেন কেউ কেউ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি উপজেলাসহ অন্যান্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দুই হাজার রোগী বহির্বিভাগে ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০০ জনের অধিক ভর্তি থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগীরা হাসপাতালে আসার পর দালাল চক্রের দাপটে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়ে। চক্রটি নানা কৌশলে রোগী ও তার স্বজনদেরকে প্রতারিত করে। বিশেষ করে জরুরী বিভাগে ও জটিল রোগীর স্বজনের কাছে এই চক্রের সদস্যরা গায়ে পড়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কখনও বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে দেওয়ার নাম করে, আবার কখনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদেরকে সর্বস্বান্ত করছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপতালের জরুরী বিভাগে ও কোনো কোনো চিকিৎসকের কক্ষে দীর্ঘ সময় আড্ডা দেন দালাল চক্রের সদস্যরা, ও চেম্বারের সামনেই ঘোরাফেরা করেন। তাদের উপস্থিতির কারণে গ্রাম থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে দালাল চক্র রোগীদের নানা প্রলোভনে নিয়ে যান প্রাইভেট ক্লিনিকে। সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়ন থেকে আসা রোগী মোজাম্মেল হক নয়ন অভিযোগ করেন তার আত্মীয়কে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে এক দালাল একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে প্যাথলজি পরীক্ষার নামে তার কাছ থেকে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা হাতিয়ে নেন। যা এই রোগীর জন্য অপ্রয়োজনীয়। এমন অভিযোগ করেন বগাদিয়া করমুলির গ্রামের মবিন মিয়া। তার স্ত্রীকে অল্প টাকায় সিজার করে দেওয়ার কথা বলে একটি ক্লিনিকে নিয়ে ১৬ হাজার টাকার বিল করে। পরে এই টাকা থেকে দালাল কিছু টাকা কমিশন নিয়ে নেয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে এই হাসপাতাল এলাকায়।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তাড়াইল থেকে তিনজন মহিলাসহ একাধিক রোগী জানান, দুজন দালাল তাদেরকে হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা নেই বলে নিকটবর্তী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারা রাজি না হওয়ায় চক্রের সদস্যরা তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে।
এই চক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতিপয় চিকিৎসক, নার্স, আউটসোর্সিং এবং কর্মচারীরা এমন দালাল চক্রের প্রভাবের অভিযোগটি পুরোপুরি সত্য নয় স্বীকার করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন।
ডা. মো. হেলাল উদ্দিন জানান – আমি গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালের অবস্থা-ব্যাবস্থা দেখে পড়ে যাই সম্পুর্ন হতাশায়। এরপর মনোবল শক্ত করে একটা একটা বিষয় নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই সামনের দিকে। যার ফলে, আজকের হাসপাতাল আর ঐসময়ের হাসপাতালের মধ্যে অনেকটাই পরিবর্তন/ব্যবধান। বর্তমানে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা, পরিস্কার পরিছন্নতা, শৃঙ্খলা ও নতুন কিছু সিস্টেম আজ দৃশ্যমান যা চোখে পড়ারমতো।
দালাল চক্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনিত অভিযোগটি সম্পুর্ন সত্য না হলেও কিছুটা সত্যতা রয়েছে। তবে, এর সাথে জড়িত রয়েছে ভিতর-বাহিরের অনেকেই। কিন্তু, আমি আমার স্টাফদের এব্যাপারে কঠোর ও তাদের নিয়ে আমি নিয়মিত কাউন্সিলিং করে যাচ্ছি। এরপরও যদি কারোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয় আমি সাথে সাথেই এ্যাকশনে যাবো। যা গত দিনে বদলিসহ প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যাবস্থা নিয়েছি কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাহিরের যারা এ পেশায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা কিছু করতে পারছিনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা ছাড়া। এখানে যদিও একটি পুলিশ ক্যাম্প ছিলো তা গত রমজান মাসে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নিরাপত্তার জন্য উঠিয়ে নিলেও পুনরায় আর স্থাপিত হয়নি, এজন্য পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে। আশা করছি এটি অল্প দিনের মধ্যেই দালালমুক্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে পারবে কিশোরগঞ্জবাসী।
Leave a Reply