নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ পরিবেশ বিপর্যয় রোধে: (একবার ব্যবহার করা/ওয়ান টাইম ইউজ) পুনর্ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক ও পলিথিন নিষিদ্ধ হোক দাবিতে এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা প্রসাশক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
২ আগষ্ট বুধবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাপা কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এর হাতে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বাপা কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন
আমস্টারডামের একটি সুপারমার্কেটে মাংস থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে ব্যবহার করা হয় কাগজের প্যাকেট। প্লাস্টিকের মতো দেখতে যদি কোনো মোড়কও ব্যবহার করা হয়, তবে তা জৈবভিত্তিক ও মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার উপযোগী।
বার্লিনের অরিজিনাল আনপ্যাকড নামের মুদি দোকানে চাল-ডালের মতো শস্যজাতীয় পণ্যগুলো খোলা প্যাকেটে রাখা হয়। বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া কনটেইনারে ক্রেতারা তেল থেকে শুরু করে টুথপেস্ট পর্যন্ত নিয়ে আসেন। প্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সচেতন দেশ ও এর নাগরিকদের পদক্ষেপ গ্রহণের উদাহরণগুলো এমন। সে তুলনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে পা বাড়ানো বাংলাদেশের অবস্থান নেহাতই প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর বাজার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের, যা সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে প্রায় চার হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমন বাস্তবতায় সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে, প্রতি মাসে ২৫০ টন পুনরায় ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির খবর, যা মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য রীতিমতো উদ্বেগের।
তাছাড়া ঢাকায় প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পরিত্যক্ত পলিব্যাগ নদী ও জলাধারে জমা হচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশন সমস্যার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ২০১৮ সালে বিশ্বের সর্বাধিক ২০টি প্লাস্টিক দূষণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। দেশের বর্জ্যের প্রায় ৮ শতাংশই প্লাস্টিক। এমন অবস্থায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি রাখে।
বিশ্বের অনেক দেশই (একবার ব্যবহার করা/ওয়ান টাইম ইউজ) পুনর্ব্যবহার অযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করছে। যেমন ভারতের নয়াদিল্লিতে প্লাস্টিকের স্ট্র নিষিদ্ধ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ণয় প্রয়োজন।
পরিবেশের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাত আইন করে নিষিদ্ধ করে সরকার। অথচ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে আইনটি কার্যকর হয়নি। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধে এ ধরনের আইন প্রণয়ন জরুরি। এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ। হতাশার বিষয়, বিশ্বে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও অবহেলা ও সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন কমেছে। অথচ সাধারণকে সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর নির্দেশনার মাধ্যমে ভারতে পাটের ব্যাগ ও পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে দেশের জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তত্পর হতে হবে। পলিথিন ও প্লাস্টিকবিরোধী আইন কার্যকরের মাধ্যমে পাট শিল্পকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় প্লাস্টিক ও নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব। তাই প্লাস্টিক ও পলিথিনবিরোধী আইনের সফল প্রয়োগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সেল গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়, কাগজ ও চটের ব্যাগ উৎপাদন এবং তা দেশের সব জায়গায় সহজলভ্য করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণে সময়ক্ষেপণ আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশকে বড় ধরনের হুমকিতে ফেলবে। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ কে সুনির্মল রাখি।
এসময় বাপা কিশোরগঞ্জ জেলা বাপার সদস্য সর্বজনাব প্রভাষক রফিকুল ইসলাম হলুদ, প্রভাষক ফজলুল করিম, প্রভাষক রাইসুল ইসলাম রাসেল, আখতারুজ্জামান শিপন, মো.ফরিদ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, তানভির হাসান, পুলক কিশোর গুপ্ত, হাকিমুল ইসলামসহ সমাজের গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply