নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে তিন বন্ধুর হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য চালক মনির হোসেন (ফয়সাল) ১৭ কে হত্যা করে তারা।
কিশোরগঞ্জ পিবিআইয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের জানান, গত ২১ জুন বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কটিয়াদী উপজেলার মণ্ডলভোগ এলাকা থেকে আলী আকবরকে ও ভোরে বাজিতপুর উপজেলার কুতুবপুর এলাকা থেকে রাকাতকে গ্রেপ্তার করে জেলা পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলী আকবর কটিয়াদী উপজেলার পশ্চিম মণ্ডলভোগ এলাকার ইমতিয়াজের ছেলে ও রাকাত বাজিতপুর উপজেলার কুতুবপুর এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে।
২২ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের আদালতে এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার অভিযুক্ত আলী আকবর (২২) ও রাকাত (১৮)।
আসামিদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পিবিআই’র কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ রোমন জানান, আলী আকবর, কাউসার ও রাকাত সমবয়সী ও বন্ধু। আলী আকবরের কটিয়াদী উপজেলার মাগুরা বাজারে একটি সেলুন রয়েছে। হাতখরচের টাকা জোগাড় করতে ওই সেলুনে বসে তাঁরা একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ২৯ নভেম্বর বাজিতপুর উপজেলার সরারচর বাজারে ওয়াজ মাহফিলে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে সরারচর বাজার অটোস্ট্যান্ড থেকে কাউসার একটি অটোরিকশা ২০০ টাকায় ভাড়া করেন। অটোচালকের ডান পাশে রাকাত ও বাঁ পাশে আলী আকবর এবং পেছনের ছিটে কাউসার বসে উজানচরের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন।
উজানচর যাওয়ার মাঝ পথে বাজিতপুর উপজেলার বাংলাবাজার পৌঁছালে তাঁরা চালককে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার সরারচরের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। বাজিতপুর উপজেলার সরারচর বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের কাছে তালতলা আসামাত্র কাউছার তাঁর সঙ্গে থাকা রশি দিয়ে অটোচালকের গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এরপর তিন বন্ধু মিলে তালতলার নিচে রাস্তার ঢালে মনিরের লাশ ফেলে দেন। রাকাত অটোরিকশা চালিয়ে ব্রাহ্মণগাঁও নয়াবাজারের একটি গ্যারেজে চার্জে দিয়ে সবাই বাড়িতে চলে যান।
হত্যাকাণ্ডের পর দিন আলী আকবর, কাউসার ও রাকাত গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে বাজিতপুর উপজেলার দুম্মাপুর এলাকায় সাদ্দামের ভাঙারির দোকানে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করে টাকা সমান ভাগ করে নেন। অটোচালকের মোবাইল ফোনটি আলী আকবর জুয়া খেলার মাঠে বিক্রি করে দেন।
পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ রোমন আরও জানান, এদিকে মনির হোসেনকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। গত বছরের ৩০ নভেম্বর লোকমুখে শুনতে পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মনিরের লাশ শনাক্ত করেন বাবা সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর মনির হোসেনের বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাজিতপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। বাজিতপুর থানার পরিদর্শক মো. শফিউল ইসলাম চলতি বছরের ২৩ মে পর্যন্ত তদন্ত করেন।
মামলাটি হওয়ার পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। সাজ্জাদ রোমন বলেন, ‘চলতি বছরের ২৪ মে পিবিআই সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি আমরা গ্রহণ করি। আমাদের তদন্তে বেরিয়ে আসে তিন বন্ধু ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে অটোচালক মনিরকে হত্যা করেন। আজ বিকেলে আলী আকবর ও রাকাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’
Leave a Reply