নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখতে স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবিসহ ১৩ দফা দাবি আদায়ে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নামে একটি সংগঠন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর)কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধনের অনুষ্ঠিত হয়।
তাদের দাবি, বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জাস্থানের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এবং ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঈমানহারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মাদ্রাসাশিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
৯ টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ছাপানো হয়েছে, রয়েছে হিন্দু নারীদের শাঁখা পরা ছবিও। ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪ টি ছবি ছাপানো হয়েছে, যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশবিশেষ বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এছাড়া ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ,দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে, যা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যাখ্যাত বলে মনে করেন তারা। জীবন-জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রণাম, গানশোনা, নাচ, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপূজা, গীতাঞ্জলি, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।
মাদ্রাসায় এসব বই পাঠপুস্তক হিসেবে গ্রহণ ও ব্যবহারে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন মাদ্রাসাশিক্ষকরা।
মানববন্ধনে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ বর্ণিত মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী শিক্ষাক্রম ও পাঠসূচি, পাঠ্যবই, এনসিটিবি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জামিয়াতুল মোদাররেছিনের বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান অব্যাহত রাখা, দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন – বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ মাসউদ আলম,সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জামান,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আ.খালেক,সদর উপজেলা সভাপতি মাওলানা আ.খালেক,পাকুন্দিয়া উপজেলা সভাপতি মাওলানা আ.হাই, কুলিয়ারচর উপজেলা সভাপতি মাওলানা মোখলেছুর রহমান প্রমূখসহ সকল বক্তারা মাদ্রাসা শিক্ষার মান বজায় রাখতে আলিম-কওমি পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিম ঐতিহ্য, কৃষ্টির সঙ্গে বর্তমান চাহিদাকে সমন্বয় করে একটি যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম তৈরি করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে যে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়- মাদরাসা শিক্ষার জন্য সরকারের প্রণীত ও জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ অনুযায়ী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম,পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরি করতে হবে।
• দাবিকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যবই প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে।
• মাদরাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় সাধন করে ১০০০ নম্বর নির্ধারণ করতে হবে।
• বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক-কর্মচারিদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে।
• সংযুক্ত ইবতেদায়ি প্রধানসহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে।
• ২০১৮ সালে প্রণীত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
• মহিলা কোটা শিথিল ও সংশোধন করে যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
• আরবি প্রভাষকদের উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
• অধ্যক্ষ-উপাধ্যাক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরবি প্রভাষকদের জন্য পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
• কামিল পাস সহকারী মৌলভিদের উচ্চতর স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
• মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন করতে হবে।
• মাদরাসার অনার্স স্তরের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে।
• দুই হাজার শিক্ষকের বকেয়াসহ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে হবে।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।
Leave a Reply