আজ ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করিমগঞ্জে রাজাকারের বাড়িতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরের দাওয়াত, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্ষোভ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি : আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন গত ১২ই জুলাই রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে, করিমগঞ্জের তালিকাভুক্ত রাজাকার মজিদ হাজীর বাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষিগনের মনে।

এ বিষয়ে গত ১৫ জুলাই করিমগঞ্জ চরপাড়ার মোঃ আলামিন, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন করিমগঞ্জের তালিকাভুক্ত রাজাকার মজিদ হাজীর বাড়ীতে গোপন বৈঠকের কারন উদঘাটনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ও আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (চারটি শাখায় অনুলিপি) লিখিত অভিযোগ ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ বলছেন একজন যুদ্ধাপরাধী মামলার প্রসিকিউটর কি করে রাজাকারের বাড়ীতে দাওয়াত খেয়ে গেলেন। তিনি রাজাকার মজিদ হাজীর নাতী করিমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতির বাড়ীতে দাওয়াত খেতে পারেননা। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে রেজিয়া চমন বেশ কয়েকবার করিমগঞ্জে এসেছেন সরকারের সর্বোচ্চ প্রটোকলে। নিজ নানীর বাড়ী করিমগঞ্জে। নানীর বাড়ীর ওয়ারিশ পাবেন বলে তিনি তা উদ্ধারের জন্য এ প্রটোকলে আসেন। পারষ্পরিক বলাবলি করেন যে, নানীর বাড়ীর জায়গা জমির খোঁজ নিতে গিয়ে নাকি হেন্তস্থার শিকার হয়েছিলেন। তাই জনগন ভাবছেন যে এ কারনে তিনি প্রশাসনের প্রটোকল নিয়ে বার বার করিমগঞ্জে আসেন। রেজিয়া চমনকে এই রাজাকারের বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়ার কথা বল্লে তিনি বলেনঃ আমি যখন হেন্তস্থার শিকার হই তখন আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। এখন কে রাজাকার, কে রাজাকার না তা আমি চিনিনা। এ ব্যাপারে বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বলেন, “স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়ীতে দাওয়াত খাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী কাজ”।
করিমগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির স্বপন ভান্ডারী বলেনঃ “প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন তার নানার বাড়ী করিমগঞ্জ হওয়ার সুবাদে যে কারোর বাড়িতে দাওয়াত খেতে পারেন। কিন্তু তিনি আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে এমন তালিকা ভুক্ত রাজাকারের বাড়ীতে রাষ্টীয় প্রটোকলসহ দাওয়াত খাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী যা বর্তমান মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা ও তাদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তিনি ব্যক্তিগত কাজে প্রটেকশন নিয়ে সেখানে দাওয়াত খেতে পারেন না। রেজিয়া চমনকে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক”।
আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষি মোঃ গোলাপ মিয়া বলেন, আমরা স্বাধীনতা বিরোধীদের অপকর্মে শাস্তির জন্য আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছি। এখন তারা যদি স্বাধীনতা বিরোধীদের বাড়ীতে দাওয়াত খান তখন আমাদের নিরাপত্তা থাকে কোথায়???
উল্লেখ্য যে, আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর রেজিয়া চমন গত ১১ই জুলাই সোমবার কিশোরগঞ্জে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউজে রাত্রি যাপন করেন। পর দিন ১২ই জুলাই মঙ্গলবার নানী বাড়ীর খোঁজ খবর নিতে এসে রাজাকারের তালিকাভুক্ত মজিদ হাজীর বাড়ীতে দাওয়াত খান। আরও উল্লেখ্য করার বিষয় হলো এ সময় ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আসামি নাসির উদ্দিন ও সামছুদ্দিনের আপন ভাই অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন এতে উপস্থিত ছিলেন। করিমগঞ্জের ইটালি মার্কেটে নিয়ে এসে দুপুরের খাবার খাওয়ান। রেজিয়া চমনের ভাই পারভেজ এতে প্রায় ২৮০০/- টাকার বিল পরিশোধ করেন। সবগুলোর ক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেন যুবদলের এক নেতা ও তার ভাই।
সুধী মহলে ও রাজাকারের বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষীদের মনেও তা নিয়ে বিরোপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাক্ষীগন বলেন, আমরা জীবন বাজী রেখে রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছি আর এখন সরকারী প্রটেকশন নিয়ে যদি প্রসিকিউটরগন এই স্বাধীনতা বিরোধীর বাড়ীতে দাওয়াত খান ও নানী বাড়ী সম্পদ আদায়ে সচেষ্ট হন তাহলে এ ট্রাইব্যুনালের প্রতি ভক্তি বিশ্বাস আর থাকেনা। আমাদেরও পরবর্তী সময়ের জন্যও এটা উদ্বেগের কারন হতে পারে। কেননা আমাদের সাক্ষীর কারনেই করিমগঞ্জের যোদ্ধাপরাধীরা ফাঁসির দন্ডে দন্ডীত হয়েছেন। এ জন্য আমরা জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। আমাদের তো কোন প্রটেকশন নেই। তাহলে আমরা যাব কোথায়?।

অভিযোগের কপিটির অনুলিপি দিয়েছে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন দপ্তরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category