নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওরে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ফেরার পথে পানিতে ডুবে যায় ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ হাবিব (২৮)।
ঘটনার পরে নৌকাতে থাকা মাঝি ইরাজ মিয়া মৃত হাবিবুল্লার স্বজন ও স্থানীয়দের সামনে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরলে তা মূর্হুতেই সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে পরিবার দাবি করে। এই রহস্যজনক মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছে না তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, গত (১৪ জুন) মঙ্গলবার সকালে হাবিবসহ সাত বন্ধু হাওরে ঘুরতে যায়। অলওয়েদার সড়কসহ হাওরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ট্রলারে করে ফিরছিল তারা। নৌকাটি করিমগঞ্জ উপজেলার চং নোয়াগাঁও হাওরে অবস্থানকালে নৌকার মাঝি টেরপায় কেউ একজন পড়েগেছে। ট্রলারে পাটাতনে চেয়ারে বসা ছিল হাবিব। ঘটনার ৩৪ ঘণ্টা পর (১৬ জুন) হাবিবুল্লাহ হাবিবের মরদেহ প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে নিকলী উপজেলার ভরাটির সীমান্তবর্তী এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
এ ঘটনায় সোমবার (২০ জুন) হাবিবুল্লাহ হাবিবের মা হোসনে আরা বাদী হয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ দ: বি: ধারায় মারিয়া ইউনিয়নের মৃত আ: জব্বারের ছেলে আজিজুল ইসলাম সুমন (৩০), হারুন অর রশীদের ছেলে সেলিম (৩১), খুদরত আলী’র ছেলে সোহেল রানা’র (২৩) নাম উল্লেখ করে ও নৌকাতে থাকা ১নং আসামী আজিজুল হক সুমনের পরিচিত (পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা) তিনজন সহ ৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। মামলা নং- সিআর (১) ২০২২।
উক্ত মামলায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবীতে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বেলা ১১ টায় কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্ত্বরে সু-পরিকল্পিত এই খুনের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে মারিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীবৃন্দ। মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ হাবীব’কে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য আসামীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শতাধীক এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে ঘন্টাব্যাপী বক্তব্য রেখেছেন তার স্বজন ও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকান্ডের সুষ্টু তদন্ত ও বিচার না পেলে আরও কঠিন কর্মসূচীর ঘোষণা দেন বক্তারা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, হাবিবুল্লাহ হাবিব মারিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিল। আসামীগণ তার প্রতি হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করিত। যার জন্য ঘটনার দিন তার অনিচ্ছা স্বত্বেও বাড়ি হইতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলিয়া মিঠামইন নিয়া যায় এবং নৌকা দিয়া ঘুরিয়া রাত্র করিয়া ফেলে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাহাদের হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার শরীরে বগলের বাম হাতের বগল পর্যন্ত তরল দাহ্য পদার্থ ঢালিয়া শারীরিক নির্যাতন করিয়া ধাক্কা দিয়া নৌকা হইতে পানিতে ফেলে দেয়। শারীরিক নির্যাতন ও আঘাতের কারণে সে সাতার জানা স্বত্বেও পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে।
মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, হাবিবের লাশ তোলার পর গলা, বুক, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম পরিলক্ষিত হয়েছে। পেটে কোন পানি ছিল না। এতে সাক্ষীগণ ধারণা করছে তাকে হত্যা করার পর পানিতে ফেলা হয়েছে। ঐদিন রাতে ছেলের বিষয়ে জানতে তার সাথে থাকা বন্ধুদের বাড়িতে গিয়া খোঁজাখুজি করেও কাউকে পাওয়া যায় নি এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল।
করিমগঞ্জের সুতারপাড়ার বাবুল মিয়ার ছেলে মাঝি ইরাজ মিয়ার ভিডিও বক্তব্য থেকে জানা যায়, নৌকা করিমগঞ্জ উপজেলার চং নোয়াগাঁও হাওরে অবস্থানকালে সে পিছনে বসা ছিল। নৌকাতে চিৎকারের শব্দ শুনে সে জানতে পারে একজন যাত্রী পানিতে পড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক সে নৌকা ঘুরিয়ে পানিতে পড়ে যাওয়া হাবিবুল্লাহকে উদ্ধারের চেষ্টা করিলে তার অপর বন্ধুদ্বয় মাঝিকে ভয় দেখিয়ে তাতে বাধা দেয় এবং আগে তাদেরকে পাড়ে ভিরাতে বলে। পরবর্তীতে মাঝি পাড় থেকে আরও লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থালে গিয়ে হাবিবুল্লাহকে অনেক রাত পর্যন্ত খুঁজেও পায়নি।
Leave a Reply