নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত আদায়ের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানালেন ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।
করোনা অতিমারির কারণে গত দুই বছর কিশোরগঞ্জে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের কোন জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এবারে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার ২৭ এপ্রিল সকাল ১১ টায় মাঠের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান – স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক চিন্তাবিদ বাংলাদেশে ইসলাহুল মুসলিহিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। এবং তার বিকল্প হিসেবে বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা মো. সোয়েব বিন আঃ রউফকে নামাজ পড়ানোর জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
কোন মুসল্লিকে জায়নামাজ ও মাক্স ব্যতীত অন্য কোন কিছুই সঙ্গে আনতে পারবেন না, বিশেষ করে ছাতা ও মোবাইলফোন কোনমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না এবারের ঈদ জামাতে।
এবারের ঈদ জামাতকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মাঠ সম্পুর্ন প্রস্তুত, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও পয়ঃনিষ্কাষন, আইন-শৃংখলা ও নিরাপত্তা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, মুসুল্লিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, মাঠে আধুনিক শব্দযন্ত্র স্থাপন, মাঠ সুসজ্জিতকরণ, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, আগত মুসুল্লিদের ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, বিশেষ দুটি (ভৈরব – কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ) ট্রেনের ব্যবস্থা, শহর সজ্জিতকরণসহ সকল কিছুই সম্পন্ন/প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আশা করছি, এবার ঈদ জামাতে জেলার সকল প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, বিচার বিভাগ, জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয় ও দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য/লাখো লাখো মুসল্লি এসে একসাথে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ (বিপিএম বার), পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদর) ও মাঠ কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শাহরিয়ার মাহমুদ খান প্রমুখ।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে জঙ্গি হামলার ঘটনাটি মাথায় রেখে এবারও ঈদুল ফিতরের জামাতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ইতিমধ্যেই শোলাকিয়া মাঠকে নিরাপত্তা চাদরে ডেকে দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যাপক সংখ্যক পুলিশসহ সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম মাঠের চারদিকে অবস্থান করছে। পাশাপাশি বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর একাধিক চৌকস দল মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন,প্রত্যেকটা মুসল্লিকে চার স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে মাঠে প্রবেশ করতে হব। ঈদের আগের রাত থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মাঠে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেটাল ডিডেকটর দিয়ে সারা মাঠ তল্লাশি করবেন। মাঠের ২৮টি গেটে মেটাল ডিডেকটর দিয়ে তল্লাশি করে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হবে। এছাড়াও মাঠে বিজিবিসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, কঠোর নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবকিছু এখন বলা যাবে না।
উল্লেখ্য এই যে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছিলো বলে সোয়া লাখ থেকেই এ মাঠের নাম শোলাকিয়া নামকরণ হয়েছে। দিন দিন এর প্রচারণা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি বছরই মুসল্লির সমাগম বেড়েই চলছে।
Leave a Reply