আজ ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লোভ লালসা পরিহার করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাড়াতে হবে স্বাস্থ্যসেবার মান

নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জ জেলা বিএমএ, স্বাচিপ ও কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস যৌথ আয়োজনে এক মত বিনিময় সভা অনুৃষ্টিত হয়।

শহরের ধানশিরি রেস্টুরেন্টে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে কিশোরগঞ্জের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও পরিচালকদদের অংশ গ্রহনে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে দেশে প্রথমবারে মতো এ মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

উক্ত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনা মুলক বক্তব্য রাখেন – কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস এর সভাপতি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে হবে। চিকিৎসার জন্য রোগীদেরকে যেন ঢাকা কিংবা ময়মনসিংহে দৌড়াতে না হয়, সেটা এখানকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক এবং বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক মালিকদের নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমানকে পুর্ণ আশ্বাস দিয়ে বলেন আপনি কিশোরগঞ্জের সন্তান আপনি যে,কদিন আছেন আপনার দক্ষতার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবায় নজির সৃষ্টি করে দেখান এরজন্য আমি সহ আমরা সবাই আপনার পাশে আছি।

তিনি আরও বলেন, শুধু চিকিৎসকদেরই নয়, প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও সেবাদানের মানসিকতার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে নতুন পোস্টিং হওয়ার পরই তিনি বদলী হয়ে চলে যান। আর কিভাবে টাকা কামানো যায়, সে চিন্তাটাই বেশি করেন। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের অনেকের মধ্যে এসি ল্যান্ড থেকে শুরু হয় ঢাকায় বাড়ি আর গাড়ি করার প্রবণতা। এসব কারণেই মানুষ প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিয়মনীতি মেনে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
পরিশেষে স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি ও বজায় রাখতে প্রতি মাসে এমন মত বিনিময় সভার প্রতি গুরুত্ব ও তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক মনিটরিং এর মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে।

মত বিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএমএর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহবুব ইকবাল বলেন- আল্লার পরে মানুষ একমাত্র বিশ্বাস করে ডাক্তারদের, আর বিশ্বাসকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষকে সর্বশান্ত করে বনে যাচ্ছেন বাড়ী গাড়ী ব্যাংক ব্যালেন্স বিশাল অঠ্রালিকার মালিক। তাই লোভ লালসার উর্ধে উঠে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্লিনিকের মালিক চিকিৎসক। তারা সঠিক সেবা দিলে কারও কোন অভিযোগ থাকতোনা। বেআইনীভাবে গড়ে উঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারী স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের প্রতি অনুরোধ জানান।

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌড়াত্ম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে এর পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, দালালদের কারণে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা প্রতারিত হচ্ছেন। রোগীর ছদ্মবেশে কোন কোন দালাল হাসপাতালে যান বলেও তিনি জানান। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় খুব শিগগির এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেখানে আপনারা নিজের কিংবা নিজেদের মা বাবার চিকিৎসা করাতে পারবেননা, সেখানে কী ধরণের চিকিৎসা হয়, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে শুধুমাত্র টাকা কামানোর মেশিন না বানিয়ে সেবার মান বাড়ানোর জন্য তিনি মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল ওয়াহাব বাদল বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলো প্রত্যাশিত সেবা দিতে পারছেনা বলেই মানুষ বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গড়ে উঠা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আ. ন. ম. নৌশাদ খান বলেন, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে শুরু করে চিকিৎসক, নার্সসহ সকলের চরিত্র বদলাতে হবে। বিবেকের কাছে জবাবদিহি থাকলে কেউ সহজে অন্যায় করতে পারেনা বলে তিনি মনে করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সুমন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদেরকে বর্জ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান।

এসময় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএমএ, স্বাচিপ ও কিশোরগঞ্জ সোসাইটি অব হেলথ সার্ভিসেস এর নেতৃবৃন্দ, কিশোরগঞ্জের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category