মোঃ আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা ঃ উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে মাধবদী পৌরসভার চিত্র। সেই সঙ্গে বদলে গেছে পৌরবাসীর জীবনমান। রাস্তাঘাট পাকাকরণ-ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এ পৌরসভায়। উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে পৌরবাসী। সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি মেয়র হাজী মোশাররফ হোসেন মানিকের আন্তরিকতা ও কর্মদক্ষতার কারণে এমন উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করছেন মাধবদী পৌরবাসী।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভাটি তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে পথ চলা পরে ২য় শ্রেণী এবং বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। মাধবদী পৌর মেয়র হাজী মোশাররফ হোসেন মানিক ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। পরে ঋণগ্রস্ত মাধবদী পৌরসভার ঋণের বোঝা কাঁদে নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারী তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মাধবদী পৌরসভাকে ঋণমুক্ত করেন। এটি তার নেতৃত্বের বড় সফলতা। এরপর তিনি মাদক, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাস ও পর্চাব্যাপারী মুক্ত শান্তিময় পৌরসভা গড়তে কাজ শুরু করেন। তিনি দিন রাত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছুটে বেড়ান। নিয়েও আসেন একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প। গত ৫ বছরে এ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, অতীতে কোনো মেয়রের আমলে এতো উন্নয়ন হয়নি। তাই খুশি পৌরবাসী।
মাধবদীর পৌর পিতা হাজ্বী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিকের নিরলস প্রচেষ্টায় হাট-বাজারের কর, দোকান ঘর ভাড়া, গবাদি পশুর হাট ইজারা, অফিস আদালতের পৌরকর, পাবলিক হোল্ডিং কর দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে এই পৌরসভা। বিগত সময়ে পৌরবাসী হোল্ডিং কর দিতে অনিহা প্রকাশ করতো আর এখন তা যার যার নিজ দায়িত্বে কর পরিশোধ করছেন। মাধবদী পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে উন্নত সড়ক যোগাযোগ, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অলিতে-গলিতে সড়ক বাতিসহ বিভিন্ন কাজের উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক স্টিলের ডাস্টবিন। প্রতিদিন পৌরসভা থেকে ময়লা ফেলার গাড়ি নিয়মিত ডাস্টবিন গুলো সহ প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ি থেকে ময়লা পরিষ্কার করছে নিয়মিত। মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স এন্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) এর আওতায় মাধবদী পৌরসভা বিগত সময়ে ৪৯ কোটি ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫’শ ৬৬ টাকার কাজ করেন। গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাটামো উন্নয়ন প্রকল্প (আইইউআইডিপি) ২য় পর্যায়ে এর আওতায় কাজ হয়েছে ১৫ কোটি টাকার। এবং এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবির) অর্থায়নে প্রতি বছর বেশ কয়েকটি প্রকল্প ছাড়াও ছোট বড় অসংখ্য প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হওয়ায় পৌরবাসী খুবই আনন্দিত। এ ছাড়া পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে মাধবদী গরু বাজারে একটি দৃস্টি নন্দন মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মঞ্চ ও মাধবদী হাই স্কুল মাঠে শহিদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুরাতন বহ্মপুত্র নদের ওপর দিয়ে পৌর শহরে প্রবেশের জন্য ৬ কোটি ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৫ টাকা ব্যয় করে শেখ রাসেল সেতু নামে একটি দৃস্টি নন্দন ব্রিজ নির্মান করা হয়েছে। মেয়র মানিক তার নিজ উদ্যোগে প্রতি শীতে হতদরিদ্র নারীদের শীতবস্ত্র বিতরন করে থাকেন। অসহায় দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রদান করেন। মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেন। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলম, ফরম ফিলাপসহ আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন। দরিদ্র ব্যক্তিদের ভ্যান গাড়ি, রিকশা, চিকিৎসা সেবা ও অসহায় বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সব ধরনের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করেন। বাল্যবিবাহ, শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেন। মশক নিধন ও বেওয়ারীশ কুকুর দমন অব্যাহত রয়েছে। এক সময় মাধবদী পৌরসভার প্রধান সমস্যা ছিলো জলাবদ্ধতা ও অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এসব সমস্যার সমাধানে মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এ জনপদের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পৌরবাসীকে একটি আলোকিত মাধবদী উপহার দিয়েছেন।
সম্প্রতি পৌরসভার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় পৌর মেয়র হাজী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিকের সাথে। তিনি জানান পৌরবাসী আমার প্রতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আমাকে পৌর মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমি প্রথম বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই পৌরসভার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছি। যতটা পারি উন্নয়ন কাজ করে মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে চাই। যাতে পৌরবাসী ভালোভাবে আমাকে স্মরণ রাখে। তবে কাজ করতে গেলে কারো ভালো লাগবে, আবার কারো চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়াবো, এটাই স্বাভাবিক। মাধবদী পৌর শহরে ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার রয়েছে। যে বাজারে বহু ব্যবসায়ী রয়েছে। এ বাজারে কখনো আগুন লাগলে তা নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বাজারের ভেতরে আসতে পারতোনা। একটি গাড়ি সড়ক দিয়ে ঢুকলে অপরদিক থেকে গাড়ি আসতে পারতোনা। আর এখন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির পাশাপাশি অন্যান্য গাড়ি অনায়াসে চলাচল করতে পারে। ব্যবসায়ীদের ও পৌর এলাকার ১২ টি ওয়ার্ডবাসীর কথা চিন্তা করে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রসস্থ করে নির্মাণ করা হয়েছে। আগে যে সড়ক দিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ভারী যানবাহনের সহায়তায় আনা-নেওয়া করতে পারতোনা এখন সেই সব সড়ক দিয়ে দিন রাত অনায়াসে মালামাল আনা নেওয়া করছে। এমনকি বাজারের চারপাশ থেকে সড়ক ব্যবস্থা জোরদারও করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাধবদী পৌর শহরের একটি বৃহৎ সমস্যা ছিলো জলাবদ্ধতা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাও নিরসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাধবদী বাজারের মধ্য দিয়ে পুরাতন বহ্মপুত্র নদের পুনরুদ্ধার ও খননের কাজ চলছে এ কাজ শেষ হলে নদের দু’পাশ দিয়ে দৃস্টি নন্দন সড়ক সহ বিনোদনের স্থান তৈরী করার পরিকল্পনাও রয়েছে আমার। এসময় পৌর মেয়র বলেন, যে পরিমাণ মানুষ আমার হয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন, ভোট চেয়েছেন, ভোট দিয়েছেন তাদের সবার মন রক্ষা করাটা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য। তারপরেও এ পৌরসভাকে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার সহ পৌরবাসী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা আমাকে সহায়তা করবেন বলেও আমার প্রত্যাশা। আগামীদিনের ভবিষ্যত যুব সমাজকে মাদকের কালো হাতের ছোবল গ্রাস করে নিচ্ছে। মাদকের ব্যাপারে বরাবরই আমার কঠোর ভুমিকা ছিলো এবং সব সময় আমি এলাকা ভিত্তিক মাদকের সোর্স শনাক্ত করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করেছি ও সব সময় করবো। যার ফলে দোষীরা আইনের আওতায় আসতে পারে। মাদক থেকে যুুব সমাজকে দূরে রাখতে মাঠ পর্যায়ে খেলাধুলা, শিক্ষা সফর, নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এসব ক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা হবে। দুর্নীতি একটি বড় ধরনের সমস্যা, তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো অন্তত আমার আমলে পৌরসভায় যাতে কোনো দুর্নীতি না হয়। সব কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা রাখা হবে। মাধবদী পৌরসভাকে একটি আধুনিক ও আদর্শ পৌরসভা হিসেবে গড়তে চাই। পৌরসভার উন্নয়নে স্বচ্ছতার মধ্য দিয়েই রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছি। কিন্তু আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরোদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে আমার সুনাম নস্ট করার পায়তারা করছে। আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। মাধবদীর পুর্বাঞ্চল সাবেক রেল লাইনের আশপাশের বিভিন্ন সরকারী খোলা জায়গায় পরিকল্পিতভাবে পৌর ঈদগাহ, পৌর শিশুপার্ক, পৌর শ্মশান, পৌর কবরস্থান সহ আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলাও সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর মেয়র মানিক নিয়মিত কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি কার্যক্রম চালিয়ে যান। পৌরবাসী নিজেদের অসুবিধা-সুবিধা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে পারেন। পৌরসভার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা ও সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র অংশ নেন। মোশাররফ হোসেন মানিকের পূর্ববর্তী মেয়ররা যে উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি, তা তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন।
বাজেট বাস্তবায়নে মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জনগণের মুখোমুখি হয়েছেন নিয়মিত। পাঁচ বছরে তিনি জনকল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পৌরবাসীর প্রশংসা পেয়েছেন। শিল্পমালিকদের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। মানিক তার নির্বাচনের আগে জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার দ্বিগুণেরও বেশি কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। নাগরিকদের ওপর তিনি করের বোঝা আরোপ করেননি। পৌরসভা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যাপক দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ওয়ার্ডগুলোতে বইছে দিন বদলের হাওয়া। উন্নয়নের কারণে ওয়ার্ড গুলো যেন এক একটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঐ সব এলাকার রাস্তাঘাট পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে সবকিছুই। পালাবদল ঘটেছে শহুরে অবকাঠামোতে, খাদ্যের প্রাপ্যতায়, জীবনযাত্রার মানে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, যোগাযোগ ব্যবস্থায়, শিক্ষায় ও স্বাস্থ্যে। বিভিন্ন স্থানেই চোখে পড়ে দৃশ্যমান এবং বাস্তবমুখী সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড। মাধবদী পৌরসভার বাস্তবমুখী উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে গেছে সবখানে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটা মহল্লায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী আজ চারদিকে দেখছে ব্যাপক উন্নয়ন।
Leave a Reply