আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরগঞ্জে শহীদ মিনারে বিশৃঙ্খলায় পুলিশ কর্মকর্তা’সহ আহত তিন

নিজস্ব প্রতিনিধি : অমর একুশে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বিশৃঙ্খলার কারণে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও সরকারী নির্দেশনায় পালিত হয়নি কিশোরগঞ্জে।

একুশের প্রথম প্রহরে জেলার গুরুদয়াল সরকারি কলেজের প্রধান শহীদ মিনারে অমর একুশের সংগীত বিহীন পুস্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় শহীদ মিনারে চারপাশে ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের স্লোগান।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে রাত ১২ টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদদের স্মরণে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ও
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এবং জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান ও পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজের পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরুর পরেই জেলা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বিশৃংখল পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের অ্যাকশনে আহত হয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা( এএসপি সদর সার্কেল) সহ ৩ জন। ছাত্রলীগের বিশৃংখলায় পুলিশ অ্যাকশনের ফলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আসা বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থাসহ জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা মাইকে ঘোষণা আসে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারী, বেসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য।

শহীদ মিনারে জেলা আওয়ামী লীগের পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মাইকে ঘোষণা অনুসারে জেলা ছাত্রলীগে সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের নেতৃত্বে তার নির্দেশনায় অনুসারী নেতা-কর্মীরা একত্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সঞ্চালনা মাইকে ঘোষণা করা হয় জেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়নের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য। এমন সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হস্তক্ষেপ করেন জেলা ছাত্রলীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হয়েছে তাই সংগঠনের নামে নয়, কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে করতে পারবে। তাঁর হস্তক্ষেপে প্রেক্ষিতে শহীদ মিনার বেদীতে নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাংগঠনিক সম্পাদক নয়নসহ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে গেলে শুরু হয় উত্তেজনা ও ধাক্কাধাক্কি।

এক পর্যায়ে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এমন সময় জেলা ছাত্রলীগ নেতা আশিক ইমরান পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে আহত হয় ও ছাত্রলীগের আরেক কর্মী আত্মরক্ষায় দৌড়াতে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়।

এরপর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশৃংখল পরিবেশ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে অপেক্ষারত অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সরকারি বেসরকারি সংস্থাসহ জনসাধারণ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শহীদ মিনারে বিশৃঙ্খলা বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণে জেলা ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধভাবে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পুষ্পস্তক অর্পণ করতে পারেন না। বিশৃঙ্খলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অ্যাকশনে জেলা ছাত্রলীগের কর্মী আশিক ইমরান মারাত্মক আহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসলেও অমর একুশের সংগীতের বিপরীতে ছিল রাজনৈতিক স্লোগান, সংগঠনের সর্বোচ্চ ৫ জনের কথা বলা হলেও মানা হয়নি সরকারি নির্দেশনা আবার কেউ কেউ জুতা পায়ে রেখেই বেদীতে অবস্থান। এমনকি দু’জন সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসনের পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় থেকে শেষ পর্যন্ত শহীদ মিনারে বাজানো হয়নি অমর একুশের সংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category