নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে খুন হাওয়া মাহতাব উদ্দিন মাতু (৬০) এর রহস্য উদঘাটনে কিশোরগঞ্জ পিবিআই, ৩ আসামী গ্রেফতার,আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী চাঁন্দপুরে মাহতাব উদ্দিন মাতু মিয়া (৬০) নামে এক মৎস্য খামারের নৈশপ্রহরীকে কুপিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা।
বিগত (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার চাঁন্দপুর ইউনিয়নের নিমুকপুরুরা গ্রামে রেললাইনের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মাতু মিয়া মৎস্য খামারে পাহারা দিতে যাওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন বলে জানান তার পরিবারের লোকজন।
পরে ভিকটিম মাহতাব উদ্দিন মাতুর ছেলে বাদী হয়ে কটিয়াদী থানার মামলা নং-০৭, তারিখ-০৫/১২/২০২০ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোডে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা করে।
মামলার বিবরণে ও আসামির জবানবন্দিতে
ভিকটিম মাহতাব উদ্দিন মাতু ৩/১২/২০২০ রাত অনুমান ৭.৩০ টায় বাড়িতে রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফিসারী পাহাড়া দেওয়ার জন্য বাড়ি হইতে ফিসারীর উদ্দেশ্যে রওনা হইয়া যায়। রাত অনুমান ১০.০০ টার সময়
ফিসারীর মালিক পক্ষের আঃ রহমান মোবাইল ফোনের মাধ্যেমে সেলিমকে ফোন করিয়া বলে বাদীর পিতা ফিসারীতে আসে নাই। তাহাকে খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না। পরে ফিসারীর মালিক পক্ষের সেলিম বাদীর বাড়ির লোকজনকে জানাইলে বাড়ির লোকজন মাতুকে খোঁজতে শুরু করে। বাদীর পিতাকে কোথাও খোঁজ করিয়া না পাইয়া রাত অনুমান ১২.০০ টার দিকে বাদীর মা মোছাঃ বানেছা খাতুন বাদীর ভাইয়ের বৌ সুফিয়া আক্তার উক্ত আঃ রহমানের ফিসারীর পাড়ে গিয়া বাদীর পিতার কথা জিজ্ঞাসা করিলে আঃ রহমান গেইট না খুলিয়া বাদীর পিতাকে আশপাশ স্থানে খুঁজতে বলে। পরে বাদীর পিতাকে আশেপাশে খোঁজ করিয়া না পাইয়া বাড়িতে চলে আসে।
ভোরবেলায় অনুমান ৫.৩০টার সময়
বাদীর ছোট ভাই হৃদয় মিয়া, বাদীর চাচা আলাউদ্দিন(৫৫),বাদীর মা বানেছা বাদীর পিতাকে খোঁজ করিতে বাহির হয়। খোঁজাখুজির এক পযার্য়ে ভোর অনুমান ৬.০০ ঘটিকার সময় কটিয়াদীর চান্দপুর ইউনিয়নের দশ কাহনিয়া বন্দের রেল লাইনের পশ্চিমে জৈনক নজরুল ইসলামের জমিতে পিতার মৃত দেহ দেখিতে পায় হৃদয়।
উক্ত বিষয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে কটিয়াদী থানার মামলা নং-০৭, পেনাল কোড রুজু করতঃ অফিসার ইনচার্জ, কটিয়াদী থানা ইন্সপেক্টর(নিরস্ত্র) আনোয়ার হোসেন এর উপর মামলার তদন্তভার অর্পন করেন।
ভিকটিম মাহতাব উদ্দিন মাতু (৬০) এর লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উক্ত হত্যার বিষয়ে ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।
পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি পিবিআই কিশোরগঞ্জ মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহন করে এসআই(নিঃ), সুমন মিয়া উপর মামলার তদন্তভার অর্পন করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম এর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করিয়া তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত আসামী ১। ফরহাদ(২৫), পিতা-মোঃ আঃ লতিফকে ২৬ তারিখ রাত অনুমান ৪.০০ ঘটিকায় এবং ২। শহিদুজ্জামান সেলিম (৪৪), পিতা-ফালু মিয়া ৪.৩০ ঘটিকায়, উভয়সাং- কটিয়াদীর দুগার্পুর তাদের নিজ বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী ১। ফরহাদ ২। শহিদুজ্জামান সেলিম কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করিলে আসামী ফরহাদ উক্ত ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্যাট, ১ নং জিআর আদালত এর বিচারক জনাব তাসলিম আক্তার এর নিকট ফৌজদারী কার্যবিধী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আসামী
ফরহাদ এর দেওয়া তথ্য মোতাবেক ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩:০০টায় আসামী রইস উদ্দিন লাইসু (৩৫), পিতা মৃত- খেলু মিয়া, সাং- পূর্ব দুগার্পুর,কে তার নিজ বাড়ি হইতে গ্রেফতার করা হয়।
সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ পায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীসহ অন্যান্য আসামীগন সমবয়সী ও পরস্পরে সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক এবং ফিসারীর মালিক। উক্ত আসামীগন ফিসারীর মাছের খাবারের সাথে গাঁজা আনিয়া এলাকায় ব্যবসা করিত। উক্ত গাঁজা ব্যবসার বিরুদ্ধে ভিকটিম মাহতাব উদ্দিন মাতু (৬০) সবসময় প্রতিবাদ করতো। ভিকটিম প্রতিবাদ করায় আসামীগন ভিকটিমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক গত ৩/১২/২০২০ তারিখ আসামীগণ উৎপেতে থাকে।
ভিকটিম মাহতাব উদ্দিন ফিসারীতে পাহাড়া দেওয়ার জন্য আসিলে গ্রেফতারকৃত
আসামীসহ অন্যান্য আসামীরা মিলে ভিকটিমকে খুন করার উদ্দেশ্যে ফিসারীতে টিনসেড ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। আসামীদের নিকট থাকা দা দিয়া মাথার ডান দিকে আঘাত করিলে ভিকটিম মাটিতে পড়ে যায়। পরে আসামীগন দা দিয়ে ভিটটিমের পেটে কুপ মারে। ভিকটিম মারা যাওয়ার বিষয়টি
নিশ্চিত হওয়ার পর সকল আসামীগন ভিকটিমের লাশ ফিসারীর নৌকায় উঠাইয়া নিয়ে রেল লাইনের পশ্চিম পাশে ফেলে আসে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply