নিজস্ব প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার এলএসডি গুডাউনের পশ্চিমে নজরুল ইসলাম এর ফিসারীতে গত ২০১৫ সনের ২২ শে জুন সোমবার অজ্ঞাত এক পুরুষের লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী।
সংবাদ পেয়ে ছুটে আসে থানা পুলিশ’ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় কিশোরগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল মর্গে।অজ্ঞাতনামা হিসেবে গ্রাম পুলিশ মোঃ আমিন মিয়া বাদী হয়ে নিকলী থানায়
৩০২/২০১/৩৪ ধারায় পেনাল কোডে মামলা নং-১২ দায়ের করে।
অজ্ঞাতনামা লাশের মামলার বিষয়ে লোক
মূখে শুনে ভিকটিমের বাবা মোঃ জালাল মিয়া, পিতামৃত একিন আলী, সাং-দামপাড়া(পূর্বপাড়া), থানা-নিকলী ও ভাই রবিন নিকলী থানায় গিয়ে লাশে পরিধেয় কাপড় চোপড় দেখে ভিকটিম হেলাল এর
লাশ বলে সনাক্ত করেন।
এসআই/আবুল কালাম আজাদ এর উপর মামলার তদন্তভার অর্পন করে নিকলী থানা পুলিশ। থানা পুলিশের ২ জন ইন্সঃ ও ৩ জন এসআইসহ মোট ৫ জন
তদন্তকারী অফিসার ইং-২২/০৬/২০১৫ হতে ১৫/১২/২০১৬ পর্যন্ত ও ডিবি পুলিশের ১ জন ইন্সঃ ও ৩ জন এসআইসহ মোট ৪ জন তদন্তকারী অফিসার ইং-১৫/১২/২০১৬ হতে ০৯/০৮/২০১৮ পর্যন্ত এবং সিআইডি (ইন্সঃ) ১ জন তদন্তকারী অফিসার ইং-০৯/০৮/২০১৮ হতে
১৮/০৩/২০১৯ শেষে বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রির্পোট সত্য দাখিল করেন। উক্ত চূড়ান্ত রির্পোট সত্য এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জিআর আদালত নং-০৪ স্ব-প্রণোদিত হয়ে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনকল্পে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআইতে হস্থান্তর করেন।
অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই এর উপর অর্পন করিলে পিবিআই গত ০৫/০৯/২০১৯ তারিখে উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ রফিকুল ইসলাম এর উপর অর্পন করেন। উক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা ০৫/০৯/২০১৯ থেকে ০৫/০৩/২০২০ তারিখ তদন্তাধীন অবস্থায় অন্যত্র বদলী হওয়ায়
পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ সাখরুল হক খান এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন। তদন্তকারী অফিসার বিশ্বসস্থ সোর্স নিয়োগসহ উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গত ৩ ডিসেম্বর অত্র মামলার সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে ১/ তাজুল ইসলাম(২১), পিতা-মোঃ মমিন মিয়া, সাং
ইসলামপুর(নাগারছিহাটি), ২। মাহাজুল(১৯), পিতা-মৃত নবী সরদার, সাং দামপাড়া গোয়ালহাটি, ৩। শরীফুল ইসলাম(১৯), পিতা-মৃত মীর হোসেন@ বিরাম আলী, সাং ইসলামপুর (নাগারছিহাটি)
সর্বথানা-নিকলী, জেলা-কিশোরগঞ্জদের গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করে। উক্ত আসামীগন ভিকটিম হেলালকে হত্যা করেছে মর্মে কিশোরগঞ্জ ৪ নং আদালত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, তাসলিম আক্তার এর নিকট ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করে।
জানা যায়, মামলাটি হত্যার মূল রহস্য
উদঘাটনসহ সার্বিক তদন্তে প্রকাশ পায় যে, আসামী তাজুল ইসলাম @ তাজু(২১), শরিফুল ইসলাম(১৯), মাহাজুল(১৯) গনের সাথে ভিকটিম হেলাল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আসামী তাজুল ইসলাম @ তাজু ও ভিকটিম হেলাল নিকলী দামপাড়া জনৈক ইসরাইলের হাঁসমুরগীর খামারে
কাজ করতো। আসামী শরিফুল রাজ মিস্ত্রী এবং আসামী মাহাজুল কৃষি কাজ করতো। একই হাঁসমুরগীর খামারে কাজ করার সুবিধার্থে ভিকটিম হেলালের সাথে আসামী তাজুলের সর্বদা সু- সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ভিকটিম হেলাল হত্যার আনুমানিক ৭/৮ দিন পূর্বে আসামী তাজুলের ০২
মাসের বকেয়া বেতন আনুমানিক ১২,০০০/- টাকা নেওয়ার জন্য আসামী তাজুলের বাবা মোঃ মমিন মিয়া তার নিজ গ্রাম ইসলামপুর(নাগারছিহাটি) থেকে দামপাড়া নিকলীতে আসে। মোঃ মমিন
মিয়া খামারে ইসরাইলকে না পেয়ে ০২ মাসের বকেয়া বেতন ভিকটিম হেলাল মিয়া থেকে দাবী করে। ভিকটিম হেলাল উক্ত মমিন মিয়া কে মালিক ইসরাইলের নিকট পাওনা টাকা চাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু
মমিন মিয়া একাধিকবার পাওনা টাকা ভিকটিম হেলালের নিকট চাওয়ার কারণে উত্তেজিত হয়ে আসামী তাজুল ইসলামের বাবা মমিনের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে ভিকটিম হেলাল
উত্তেজিত হয়ে আসামী তাজুলের বাবাকে ০২ টি চড় থাপ্পর মারে। উক্ত সময়ে আসামী তাজুল খামারে ছিলেন না। পরবর্তীতে আসামী তাজুল তার বাবা মমিন থেকে ভিকটিম হেলাল কতর্ৃক চড় থাপ্পর
মারার বিষয়টি জ্ঞাত হয়ে এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করে এবং বিষয়টি নিয়ে আসামী শরিফুল ও মাহাজুলের সাথে আলোচনা করে। উক্ত আলোচনা থেকে আসামী তাজুল ইসলাম, শরিফুল ও মাহাজুল ইসলাম ভিকটিমকে হত্যা করত: লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। উক্ত পরিকল্পনা মতে ২০১৫ সালের জুন মাসে (৮/১০ রমজান) তাজুল, মাহাজুল এবং শরিফুল দামপাড়া বাজার হইতে হেলালকে একজন
নিকলী হতে একজন খারাপ মেয়ে নিয়া আসার প্রলোভন দেখাইয়া ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। ঘটনার তারিখ ও সময়ে উক্ত তিনজন আসামী হেলালকে পুকুরের পাড়ে নিয়ে জাবড়াইয়া ধরে পানিতে ফেলিয়া
মাথা ডুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ভিকটিম হেলালের পরিধেয় লুঙ্গি দিয়ে পা, শার্ট দিয়ে হাত বাধে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে লুঙ্গি এবং শার্টের ভিতরে ইট ও পাথরের টুকরা ডুকিয়ে লাশ পানির নিচে ডুবিয়ে দেয়।
Leave a Reply